সেখানে রূপকথাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বাকি দু’জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হওয়ায় পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় গ্রিন করিডর করে তাদের বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া অনুযায়ী ত্রিদীপকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। ফুসফুস, মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙেছে হাত-পা। অন্যদিকে অদ্রিকার বুকের ছ’টি পাঁজর ভেঙে গিয়েছে। তবে সে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে।
গরমের ছুটির আগে এ দিনই ছিল শেষ স্কুল। ছুটির পর চার বন্ধু স্কুল থেকে কিছুটা এগিয়ে ভেপার মোড়ের কাছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে পার হয়ে অটো ধরতে যাচ্ছিল। নিমতা অভিমুখী লেন পার করে এক পড়ুয়া মাঝখানের ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে গেলেও ওই তিন জন অসাবধানবশত ব্যারাকপুর অভিমুখী লেন পার হচ্ছিল। উড়ালপুলটি যেখানে নামছিল সেখান দিয়েই তারা রাস্তা পার হচ্ছিল। সে সময় ওই উড়ালপুল দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে আসা একটি মিনি ট্রাক তাদেরকে ধাক্কা মারে। তিন জনই ছিটকে পড়ে দূরে।
পাশেই গ্রিল কারখানায় কাজ করেন সাজিদ আনসারি, অনুপ ঘোষ। তাঁরা বলেন, ‘আচমকা বিকট আওয়াজ পেয়ে আমরা ছুটে গিয়ে দেখি স্কুলের পোশাক ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সার্ভিস রোডে তিন পড়ুয়া পড়ে আছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। সে সময় সার্ভিস রোড দিয়ে ওদের স্কুলেরই একটি বাস আসছিল। তড়িঘড়ি ওই বাসে করে ওদের হাসপাতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়।’ স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর ওই গাড়িটি গতি বাড়িয়ে ব্যারাকপুরের দিকে পালিয়ে যায়। যদিও পরে ব্যারাকপুর ওয়ারলেস মোড় থেকে পুলিশ গাড়িটিকে আটক করে। চালক জয়ন্ত সাঁতরাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রহড়া থানা এবং ট্র্যাফিক বিভাগের পুলিশ কর্মীরা। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পুলিশের ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করা হয়। মৃত রূপকথার আর এক যমজ বোন রয়েছে। বাবা আদিত্য দত্ত কর্মসূত্রে বিলাসপুরে থাকেন৷ মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন তিনি। মা রুমা দত্ত গৃহবধূ। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিল রূপকথা। দশমের বোর্ডে ৯০ শতাংশের কাছে নম্বর পেয়েছিল সে।
বাড়িতে কথা দিয়েছিল, দ্বাদশে আরও ভালো রেজাল্ট করবে। রূপকথার কাকা জয় মুন্সি বলেন, ‘সবই স্বপ্ন থেকে গেল। দুপুরে স্কুল থেকে ফোন করে ভাইঝির দুর্ঘটনার কথা জানানো হয়। আমরা হাসপাতালে পৌঁছে শুনি ও আর নেই।’ ময়না-তদন্তের পর তার মরদেহ মধ্যমগ্রামের একটি পিস হাভেনে রাখা হয়েছে তার বাবার আসার অপেক্ষায়।
অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ত্রিদীপের বাবা মারা গিয়েছেন বছর খানেক আগে। পরিবারের একমাত্র সন্তান সে। মায়ের একমাত্র অবলম্বন। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক দ্যুতিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মর্মান্তিক ঘটনা। রূপকথা অত্যন্ত মেধাবী শুধু নয়, স্পোর্টস থেকে স্কুলের অন্যান্য অ্যাক্টিভিটিতেও ওর জুড়ি মেলা ভার। স্কুলের ভাইস ক্যাপ্টেন ছিল ও। পরিবারকে সান্ত্বনা জানানোর কোনও ভাষা আমার নেই।’