Arjun Singh,জোড়া সেনাপতির দাপটে ফিকে ‘বাহুবলী’র অর্জুন সিংয়ের গর্জন – bjp leader arjun singh and tmc candidate partha bhowmick face off at barrackpore in lok sabha election


অশীন বিশ্বাস, ব্যারাকপুর
২০১৯ থেকে ২০২৪। বদলেছে সময়, বদলেছে পরিস্থিতি। ব্যারাকপুরের গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। শাসক তৃণমূলের প্রতিপক্ষ এ বারও বিজেপির অর্জুন সিং। কিন্তু এ বার শিল্পাঞ্চলের ভোট ময়দানে উধাও ‘বাহুবলী’ শব্দটি। চোখ রাঙানি, শাসানি নৈব নৈব চ ব্যারাকপুরে! নজিরবিহীন এই কৃতিত্বের অন্যতম দাবিদার দুই বিধায়ক জগদ্দলের সোমনাথ শ্যাম এবং বীজপুরের সুবোধ অধিকারীই এ বার ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের ভোটের সেনাপতি।কয়েক দশক ধরে তৈরি করা নিজের গড়েই এ বার সাবধানে পা ফেলছেন ‘বাহুবলী’ অর্জুন সিং। হুঙ্কার মাঝেমধ্যে ছাড়লেও পাল্টা হুঙ্কারে ফিকে হয়ে যাচ্ছে তাঁর গর্জন। সোমনাথ, সুবোধ বলছেন, ‘আসল বাহুবলী তো মানুষ। গুন্ডা-মস্তানরা কখনও শেষ কথা বলেনি, আগামী দিনেও বলবে না।’

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী হিংসায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ব্যারাকপুর। বীজপুর থেকে নৈহাটি, ভাটপাড়া ও জগদ্দল থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত কার্যত দমবন্ধ করা সন্ত্রাস চলে কয়েক মাস। মারধর, হুমকি, বাড়ি ভাঙচুরের পরপর কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটেছিল। তৃণমূলের অভিযোগ, সবটাই হয়েছিল অর্জুন সিং বিজেপির সাংসদ হওয়ার পর তাঁর নির্দেশে।

২০১৯ সালে ব্যারাকপুর জুড়ে ভোট পরবর্তী হিংসা যেন আজও দগদগে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সে দিনের সেই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের মূল ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন সোমনাথ এবং সুবোধ। প্রথম জন কংগ্রেস থেকে এবং দ্বিতীয় জন বিজেপি থেকে এসেছিলেন ওই ভোট পরবর্তী হিংসার সময়েই। তৃণমূলের সন্ত্রস্ত কর্মীদের সাহস জুগিয়ে রুখে দাঁড়ানোর মনোভাব ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং পদক্ষেপে ব্যারাকপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল এই জুটি।

পুরস্কার হিসেবে দু’জনই ২০২১ সালে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হন। সে দিনের দুই কারিগর এ বার তাঁদের রাজনৈতিক অভিভাবক পার্থ ভৌমিককে জেতানোর গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

সোমনাথ নিজের বিধানসভা জগদ্দল এবং পার্শ্ববর্তী ভাটপাড়া বিধানসভা চষে বেড়াচ্ছেন। সুবোধ তাঁর বীজপুর বিধানসভার পাশাপাশি আমডাঙা-সহ অন্যান্য বিধানসভাতেও নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন৷ দলীয় মিটিং মিছিল, সভা সমাবেশের বাইরে সুবোধ জোর দিয়েছেন খাটিয়া বৈঠকে। আর সোমনাথের গুরুত্ব পাড়া বৈঠকে। অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় এই খাটিয়া ও পাড়া বৈঠক যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে বলে দাবি শাসক শিবিরের। গোটা বীজপুর বিধানসভায় ১০৫টি খাটিয়া বৈঠক করার কথা সুবোধের। ইতিমধ্যেই ৮৫% তিনি শেষ করেছেন।

প্রতিটি খাটিয়া বৈঠকে প্রথমে একটি ২৫ মিনিটের ভিডিয়ো দেখানো হচ্ছে। সেখানে বিজেপির আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি, বিজেপি নেত্রীর মুখে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়ার মতো বার্তা তুলে ধরা হচ্ছে। তার পর সুবোধ ১৫ মিনিটের বক্তব্যে মূল্যবৃদ্ধি থেকে মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার কথা বলছেন। ৯৩টি ফৌজদারি মামলা নিয়ে প্রার্থী হওয়া বিজেপির অর্জুন সিং ও উল্টোদিকে সংস্কৃতি মনস্ক পার্থ ভৌমিকের কথা তুলে ধরছেন পাশাপাশি।

সোমনাথ বুথ ধরে ধরে পাড়া বৈঠকে ২০১৯-এর সন্ত্রাসের প্রসঙ্গের সঙ্গেই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে অর্জুন যা করতে পারেননি তা তুলে ধরছেন। ভাটপাড়া পুরসভায় দুর্নীতি, ভাটপাড়া নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে তুলে ধরছেন।

দু’জনেই ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়িক সমিতি, বিভিন্ন গোষ্ঠী, পাড়ায় পাড়ায় তৈরি মহিলা গোষ্ঠীদের নিয়েও আলাদা আলাদা বৈঠক করছেন। যে ভাটপাড়া, জগদ্দল অঞ্চলে অর্জুন সিংয়ের বাইরে কিছু ছিল না, সেখানেই এখন উল্টো স্লোগান, ‘হামারে নেতা ক্যায়সা হো, সোমনাথ শ্যাম জ্যায়সা হো।’ সুবোধ বলছেন, ‘তিন রাউন্ড গণনা শেষেই অর্জুন সিং বুঝতে পারবেন উনি এ বার কাদের সঙ্গে খেলতে নেমেছিলেন।’ আর সোমনাথ বলছেন, ‘অর্জুন সিংয়ের হিংস্র রাজনীতি বন্ধ করা আমার শপথ। আগামী দিনে হলুদ ফাইল খুলব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *