বিচারপতির নির্দেশ, আপাতত ওই মামলায় কোনও পদক্ষেপ করবে না রাজ্য। আজ, শুক্রবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে মামলার পরবর্তী শুনানি। বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রও মামলা করেছিলেন হাইকোর্টে। কিন্তু বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এ দিন উপস্থিত না থাকায় ওই মামলাটি এ দিন শুনানির জন্য ওঠেনি। ফলে ওই মামলাটিও আজ, শুক্রবার বিচারপতি সেনগুপ্তের এজলাসে ওঠার সম্ভাবনা।
বুধবার রাতে সন্দেশখালির এক প্রতিবাদী মহিলাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল এলাকার তৃণমূল নেতা দিলীপ মল্লিক-সহ তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মহিলার অভিযোগ, বুধবার রাতে তাঁকে মুখ চেপে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মেছোভেড়ির মধ্যে ফেলে রাখে দুষ্কৃতীরা। তাঁর পোশাক ছিঁড়ে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ।
কোনও রকমে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চিৎকার শুরু করেন ওই মহিলা। গ্রামের লোক ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। নির্যাতিতা মহিলার দাবি, তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দুষ্কৃতীরা বলছিল, কোনওভাবে তাঁকে দিলীপ মল্লিকের হাতে তুলে দিতে পারলে সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতন নিয়ে যে সব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সেই ন্যারেটিভটা পাল্টে যাবে। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যান সন্দেশখালির প্রতিবাদী মুখ রেখা পাত্র।
সন্দেশখালির মহিলাদের নির্যাতন নিয়ে স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো সামনে আসার পর থেকে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছে এলাকায়। কয়েকদিন আগে এই দিলীপ মল্লিককেই বেধড়ক মারধর করেন প্রতিবাদী মহিলারা। এ দিনের ঘটনার প্রসঙ্গে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা দিলীপ মল্লিকের দাবি, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলামই না। যখন ঘটনা ঘটেছে বলা হচ্ছে আমি তখন সন্দেশখালিতে তৃণমূলের পার্টি অফিসে ছিলাম। ভোটে হার অনিবার্য জেনে বিজেপি নেতা-কর্মীরা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন।’
বৃহস্পতিবারই মাম্পি দাসকে ১২ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বসিরহাট মহকুমা আদালতে নিয়ে আসে সন্দেশখালি থানার পুলিশ। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশের পর ফের তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় দমদম সেন্ট্রাল জেলে। জোর করে সাদা কাগজে সই করিয়ে তাতে মহিলাদের দিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ লিখে থানায় জমা দেওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি পিয়ালির বিরুদ্ধে এলাকার এক প্রতিবাদী মহিলাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
বসিরহাট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে জেল হেফাজাতে পাঠান বিচারক। আজ, শুক্রবার শুনানির জন্য তাঁকে ফের বসিরহাট মহকুমা আদালতে নিয়ে আসা হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিন স্থানীয় বিজেপি নেত্রী অর্চনা মজুমদার বসিরহাট আদালতে পিয়ালিকে দেখতে আসেন। আদালত থেকে দমদম সংশোধনাগারে যাওয়ার পথে পিয়ালি বলেন, ‘ভয় পেয়ে পিসি-ভাইপো আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসিয়েছে।’
এ দিনই সন্দেশখালির মহিলাদের ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে আগেই চার্জশিট পেশ করেছে পুলিশ। আইনজীবীরা দুই অভিযুক্তের জামিনের আবেদন জানান। এই মামলার অন্যতম অভিযোগকারী, বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র এ দিন সাক্ষ্য দিতে বসিরহাট মহকুমা আদালতে আসেন।
বসিরহাট কেন্দ্রে ভোটের প্রচারে এ দিনই হাসনাবাদের ভবানীপুর মডেল বাজারে জনসভা করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেখানে বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালের ওই স্টিং ভিডিয়ো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ করছি, যদি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি বলে ভিডিয়োটা ভুয়ো, আমরা যা সাজা দেবে নেব। কিন্তু যদি বলে ভিডিয়োটা সত্যি, তা হলে ওতে যার যার নাম পাওয়া গেছে তাদের হেফাজতে নিয়ে বিচার করতে হবে।’
তাঁর কথায়, ‘বিজেপি এখন ফাঁপরে পড়েছে। যে করে হোক বিজেপি এই ‘কেস’ ঘোরানোর চেষ্টা করছে। পুলিশকে অনুরোধ করব সঠিক অভিযোগ নিয়ে, নিরপেক্ষ তদন্ত করতে।’