এ বার নির্বাচনে জেতা কি তাই ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে?
লকেট বললেন, ‘এ বার কিংবা সে বার বলে কিছু নেই। যে কোনও নির্বাচন জেতাই কঠিন।’ তা হলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তাঁকে কাবু করতে পারেনি? লকেট হেসে বলছেন, ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শব্দটা ঠিক নয়। নানা মানুষের নানা মত থাকে। তার পর সবাই মিলে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তৃণমূলের মতো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বোমাবাজি, খুনখারাপির অবস্থা আমাদের এখানে নেই।’
২০২১-এর বিধানসভা ভোটে সাংসদ লকেটকে চুঁচুড়া বিধানসভা আসনে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। বিধানসভা ভোটে লকেট হেরে যান। শুধু তা-ই নয়, হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের সব ক’টাতেই জিতেছিল তৃণমূল। তার পরেও লকেটের মনে হচ্ছে, এ বারের ভোটে তিনি জয় পাবেন। লকেটের যুক্তি, ‘তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে মানুষ বীতশ্রদ্ধ।’ এবং তাঁর দাবি, লোকসভা নির্বাচন বলেই বাংলার মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকে আছেন।
লকেটের প্রতিপক্ষ, হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দই, ফল খেতে দেখা যায়। লকেট এক কাপ চা-ও চাইলেন না পার্টি অফিসে ঢুকে। লকেট আর রচনা এক সময়ে শুটিং করেছেন একসঙ্গে, দিনের পর দিন। সেই রচনার সঙ্গে আজ গল্প করার সুযোগ পেলে কী বলবেন? ‘দশ বছরে আমার সঙ্গে রচনার দেখা হয়নি। দশ বছর আগে সিনেমা যে ছেড়েছি, সেটা কিন্তু নিজের ইচ্ছেয় নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমাকে একটার পর একটা সিনেমা থেকে বাদ দিয়েছে। তিন-চার বছর রোজগার বন্ধ ছিল। এখন মনে হয়, ভালোই হয়েছে। না-হলে রাজনীতিতে পুরোপুরি আসা হতো না,’ বলছেন লকেট।
তবে তাঁর সংযোজন, ‘রচনার সঙ্গে আমার পুরোনো যা স্মৃতি আছে, তাতে আমরা একটা বা দু’টো গোটা রাত গল্প করে কাটাতে পারি। রচনাকে তা হলে বলতাম, তুমি যা যা বলছ, কী যে কেস খাচ্ছ, কী যে পাগলামি করছ!’ প্রথমে অভিনেত্রী এবং তার পর টিভি প্রোগ্রামের সঞ্চালক হিসেবে রচনার বিপুল জনপ্রিয়তা। সে জন্য লকেটকে কি রচনা ভোটে হারিয়ে দিতে পারেন? ‘এটা সিনেমা নয় যে, দেবের একটা ছবি মুক্তি পাচ্ছে বলে জিতের একটা ছবিকে লড়িয়ে দেওয়া হলো! কে কত জনপ্রিয় নায়িকা। তা দিয়ে কিছু হবে না। যে কারণে মিমি চক্রবর্তী বা নুসরত জাহানকে দিয়ে ভোট টানা গেলেও তাঁরা পার্লামেন্টে গিয়ে কিছু করতে পারেননি’, ব্যাখ্যা লকেটের।
তবে মিমি, নুসরতের ক্ষেত্রে যে যুক্তি খাটে, দেবের বেলায় তো সেটা খাটে না? লকেটের বক্তব্য, ‘দেব একটা আলাদা জায়গার চলে গিয়েছে।’ হুগলির বিদায়ী সাংসদ অবশ্য এটাও বলছেন, এলাকায় দুর্নীতি, কর্মীদের উপর অবিশ্বাস— এ সব থেকেই রচনার মতো ‘ফাটকা’-র প্রয়োজন পডে়ছে তৃণমূলের।
প্রচারের সময়ে হুগলির একটি মন্দিরে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে ধরেছিলেন অনুরাগীরা। সেই মন্দিরের ঢাকের আওয়াজে মনে হলো, ভোটের উৎসব নয়, এখন দুর্গোৎসব। জিপে উঠে লকেট যখন প্রচারে, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বহু মহিলা তখন তাঁকে ছুঁয়ে দেখতে হাত বাড়াচ্ছিলেন। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে কেঁপে উঠল আকাশ-বাতাস।
গায়ে জড়ানো হরে কৃষ্ণ হরে হরে লেখা নামাবলি কি তাঁকে শান্তি দেয়? খোলসা করেন লকেট, ‘বাবা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পূজারী ছিলেন। মমতা শঙ্কর ব্যালে ট্রুপে যখন নাচতাম, তখন নামাবলির কুর্তি বা টপ পরেছি। তখন থেকে খুব ভালো লাগত নামাবলি। কেউ যেন না-ভাবেন, এর মাধ্যমে কোনও ধর্মকে তুলে ধরতে চাইছি।’ কখনও ইচ্ছে করে, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবেন? ‘রাজনীতির বাইরের মানুষদের অনেক সময়ে মনে হয়, এগুলো খুব সহজ। কিন্তু একবার একটা দলে ঢুকে কাজ করলে এ সব কিছু আর মাথায় থাকে না’— লকেটের উত্তর পোক্ত রাজনীতিকের।