ভোট আছে ওঁদেরও। কিন্তু ভোট দেওয়া হয় না। একটা সময় হাওড়া শিল্পাঞ্চলকে বলা হতো শেফিল্ড অফ ইস্ট। এখানে শুধু পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা নয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিক কাজের জন্য আসতেন। কিন্তু আজ পেটের টানে হাজার হাজার শ্রমিক এখান থেকেই ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন।সেই সব পরিযায়ী শ্রমিকরা ভোটের সময়ে বাড়ি ফিরতে না পারায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে রাজ্যে কাজ নেই বলে বিরোধীরা কটাক্ষ করেছে রাজ্য সরকারকে। অনেক দিনই হাওড়া তার পুরোনো গৌরব হারিয়েছে। ফলে ঘরের ছেলেরা আর ঘরের কাছে কাজ পান না। বাধ্য হয়ে রুটিরুজির টানে হাজার হাজার যুবক পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে এমনকি ভিন দেশেও।
অধিকাংশই নির্মাণশিল্প, সোনা এবং হীরের গয়না, জরির কাজ অথবা ছোট ছোট কারখানায় কাজ করেন। এখানে পরিবার থাকে। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, বাইরে কাজের মজুরি বেশি হওয়ায় তাঁরা ওখানে খাওয়া থাকার খরচ চালিয়েও বেশ কিছু টাকা ঘরে পাঠাতে পারেন।
করোনার আগে এই সব পরিযায়ী শ্রমিকরা ভোটের সময় ঘরে ফিরে নিজের ভোট নিজে দিতে পারতেন। কিন্তু এ বার বাড়িতে আসার জন্য বাড়তি খরচ করার মতো অবস্থায় নেই অনেকেই। তার উপর যেখানে কাজ করেন, সেখানে ছুটি পাওয়ার সমস্যা। ফলে বেশির ভাগ শ্রমিকই গ্রামে ফিরতে পারছেন না।
হাওড়া থেকে ঠিক কত পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে কাজ করছেন, তার হিসেব জেলা প্রশাসনের কাছেও নেই। তবে ভোট আসতেই এই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিরোধী সিপিএম এবং বিজেপি সরাসরি দায়ী করেছে রাজ্য সরকারকে। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যে শিল্পের প্রসার না হওয়ায় এখানকার বেকার যুবকরা বাইরে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
সিপিএমের হাওড়া সদর কেন্দ্রের প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্য সরকার শিল্পের উন্নয়নে কোনও কিছু না করায় এই পরিস্থিতি হয়েছে। বেকাররা যাতে হাতে কাজ পান তার জন্যই আমরা লাগাতার আন্দোলন করছি।’ বিজেপির হাওড়া সদরের প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘রাজ্যের শাসক দলের দুর্নীতি, তোলাবাজি এবং কাটমানির জন্য এখানকার শিল্পের নাভিশ্বাস উঠেছে। পুরোনো বড় বড় কারখানা বন্ধ। নতুন করে কোনও কারখানা তৈরি হয়নি। তাই দক্ষ শ্রমিকরা বাইরে চলে যাচ্ছেন।’
শাসক দল অবশ্য অভিযোগ মানছে না। তৃণমূলের বক্তব্য, সিপিএমের আমলেই একে একে লাটে উঠেছে সব শিল্প। রাজ্যে পালাবদলের পর পরিস্থিতি ঘুরছে। তৃণমূলের কল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকরা ভোট দিতে আসতে পারছে না এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। প্রতিবারের মতো এ বারও প্রায় ৯০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক ভোট দিতে আসছেন। বেশির ভাগই এসে গিয়েছেন। কিছু মানুষ হয়তো নানা কারণে
আসতে পারেননি।’