‘রথে নয়, পথে প্রচার। শিষ্টাচার মেনে মার্জিত ভাষায়, মার্জনা নয়, লড়াই’— ছোট্ট একটা কুলোয় এমনটাই লেখা ছিল। সেই কুলো আর একটা মাউথপিসের মতো দেখতে মেমেন্টো তুলে দেওয়া হয় সৃজন ভট্টাচার্যের হাতে। মুখে সব সময়ে মিষ্টি হাসি, ভাষায় কোনও তিক্ততা নেই। তাই এক হাঁড়ি মিষ্টিও দেওয়া হলো যাদবপুর কেন্দ্রের তরুণ প্রার্থীকে।
পথসভা থেকে শুরু করে টিভির পর্দায় টক শো — অশালীন এবং চরমতম কটুক্তিই যখন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন ব্যতিক্রমী হলেন কী করে? সৃজন বলেন, ‘আমার ভরসা আছে আমার রাজনীতির ওপর। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। তাই আমাকে কখনও এমন করতে হয়নি। আর কেউ যদি আমার কুকথায় প্রভাবিত হন, তখন তাঁর কাছে আমার ভাবমূর্তি কী হবে!’
সরস্বতী ভাণ্ডারের থেকে এমন পুরস্কারে নিজেকে ‘অত্যন্ত সম্মানিত’ মনে করছেন সজল ঘোষ। বললেন, ‘ভাবতেও কষ্ট হয় বাংলায় এমন দিন এসেছে যে, খারাপ কথা না বলার জন্য প্রাইজ় দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতিতে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ তো থাকবেই। কিন্তু যাঁরা প্রচারে বেরিয়ে অন্যদের কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেন, তাঁরা আসলে নিজেদের রুচি এবং শিক্ষার বিজ্ঞাপন দেন।’
এই পুরস্কারের তৃতীয় প্রাপক মালা রায় প্রচারে ব্যস্ত থাকার জন্য স্মারক নিতে আসতে পারেননি। তাঁর কাছে পুরস্কার পৌঁছে দেওয়া হয়। রবিবারের এই অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে সরস্বতী ভাণ্ডারের উদ্যোক্তা ঝরনা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের প্রচার করছি না। সমাজের বিভিন্ন স্তরের ১০০ জন মানুষের মতামত নিয়েছি। ওঁরা জানিয়েছেন কোন তিন প্রার্থী প্রচারে কখনও কোনও খারাপ শব্দ উচ্চারণ করেননি। তার ভিত্তিতে আমরা সম্মান জানিয়েছি।’
এখনও বাংলায় ভোটের পর্ব শেষ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে তিন জনকে ‘শালীনতার পুরস্কার’ দেওয়া কি যুক্তিযুক্ত? এর জন্য যদি কমিশন কৈফিয়ত তলব করে? জবাবে ঝরনা বলছেন, ‘শাস্তি দিলে শাস্তি নেব। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমার একটা প্রশ্ন থাকবে। নির্বাচনে অশালীন শব্দ ব্যবহার বন্ধ করতে এখনও পর্যন্ত কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?’