সম্প্রতি একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে পুরুষ কণ্ঠটি প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বলে দাবি করা হয়েছে দেবাংশুর তরফে। (এই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি এই সময় ডিজিটাল)
অডিয়োর কথোপকথোন নীচে তুলে ধরা হল-
নারী কণ্ঠ-কে বলছেন?
পুরুষ কণ্ঠ- আপনি কে বলছে?
নারী কণ্ঠ- আপনি অভিজিৎবাবু বলছেন তো? সকালে কল করেছিলাম। আমার নাম…। সকালে ফোনটা ডিসকানেক্ট হয়ে গিয়েছিল।
পুরুষ কণ্ঠ– কী বিষয়ে ফোন করেছিলেন?
নারী কণ্ঠ-স্যার আমি কিছু নেতার বিরুদ্ধে কেস করেছিলাম।
পুরুষ কণ্ঠ– হুম তো!
নারী কণ্ঠ- স্যার, সকালে জিজ্ঞাসা করলাম এই ম্যাটারে। তারপর… আমাকে ধর্ষণ- মারধর করা হয়েছিল। ফোন রিসেট করে দেওয়া হয়েছিল প্রমাণ লোপাটের জন্য।
পুরুষ কণ্ঠ- আপনি কি কোনও রাজনীতি করতেন?
নারী কণ্ঠ– হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি তো মহিলা মোর্চার জেলা নেত্রী আছি বিজেপির।
পুরুষ কণ্ঠ– এখনও আছেন?
নারী কণ্ঠ- হ্যাঁ এখনও আছি।
পুরুষ কণ্ঠ- আচ্ছা! কে করেছিল এটা! কী নাম?
নারী কণ্ঠ- কয়েকজনের নাম নেন ওই নারী কণ্ঠ। আরও অনেকের নাম রয়েছে যারা পরে হুমকি দিয়েছে। কাস্টডিতেও ছিল…
পুরুষ কণ্ঠ– আমাকে কি করতে বলছেন?
নারী কণ্ঠ- বলছি স্যার আমি যে কারণে আপনাকে ফোন করেছি ওরা আপনার সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি কী ভাবে ন্যায়বিচার মানে… (মাঝপথে নারী কণ্ঠকে থামিয়ে)
পুরুষকণ্ঠ– আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানে?
নারী কণ্ঠ-আপনার সঙ্গে ওরা ঘুরে বেড়ায়?
পুরুষ কণ্ঠ– কী রকম?
নারী কণ্ঠ– আমি অনেক ভিডিয়োতে দেখেছি (ফের নারীকণ্ঠকে মাঝপথে থামিয়ে)
পুরুষ কণ্ঠ– আমি এদের কাউকে চিনি না। আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় বলতে কী মিন করছেন! আমার সঙ্গে প্রচারে থাকে!
নারী কণ্ঠ– প্রচারে তো কত লোকই থাকতে পারে। আমি কি সকলকে চিনব!
নারী কণ্ঠ– না আপনি একটা ভিডিয়োতে স্যার বলছিলেন হ্যাঁ আপনার কথা … বলেছিল (বিজেপির এক তাবড় নেতার নাম নেন নির্যাতিতা)। ওরা সকলেই তাঁর অনুগামী এবং খুব কাছের। এমনও হয়েছে স্যার যে তিনি আমাকে মুখ ঢাকার জন্য, কেস তুলে নেওয়ার জন্য লোক পাঠিয়েছিল।
পুরুষ কণ্ঠ– না, না, এই সব আজেবাজে কথা বলবেন না। আপনি যখন একটা দলে রয়েছেন সেই দলের উচ্চতর নেতৃত্বকে ফোন করুন। আমাকে সরাসরি ফোন করছেন কেন? কে আপনাকে এই বুদ্ধি দিয়েছে?
নারী কণ্ঠ-কে বুদ্ধি দেবে স্যার!
পুরুষ কণ্ঠ– আমি বুদ্ধি দেওয়ার জন্য বসে রয়েছি! আপনার তা মনে হচ্ছে!
নারী কণ্ঠ– বুদ্ধি না স্যার। আপনি যে ধর্ষকদের সাথে নিয়ে ঘুরছেন স্যার (মাঝপথে থামিয়ে)
পুরুষ কণ্ঠ– ফোন রাখুন ফোন রাখুন। এভাবে বিরক্ত করবেন না। ফোন রাখুন
নারী কণ্ঠ– স্যার আমার কথাগুলো শুনুন
(ফোন কেটে যায়)
(এই অডিয়ো রেকর্ডটির সত্যতা যাচাই করেনি এই সময় ডিজিটাল)
দেবাংশুর দাবি
এই অডিয়ো চালিয়ে দেবাংশু ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ‘এই অডিয়োটিতে পুরুষ কণ্ঠটি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। মহিলা কণ্ঠটি বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী। বিজেপিরই কয়েকজনের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ। এই নিয়ে মামলা চলছে। এই বিষয়টি নিয়ে প্রাক্তন বিচারপতির কাছে, যিনি এতদিন অসহায় মানুষের মসিহা হওয়ার নাটক করেছিলেন তাঁর থেকে সুরাহা পাওয়ার আশা করেছিলেন।’
এই তৃণমূল প্রার্থী আরও বলেন, ‘অভিযোগ শোনা তো দূরের কথা ওই মহিলাকে দূর ছাই করে তাড়িয়ে দিলেন। তিনি তো অসহায় মানুষের রক্ষাকর্তার ইমেজ তৈরি করেছিলেন। আজকে অসহায় একজন নারীর আবেদন শুনে তাঁর রাজনৈতিক এজলাসের দরজা বন্ধ করে দিলেন। তাহলে এতদিন তিনি যে ইমেজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন তা ভণ্ডামি ছিল?’
তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী আরও দাবি করেন, ‘এই ভিডিয়োটি ইউ টিউবে একটি চ্যানেল আপলোড করেছে। আমরা সেখান থেকে এই ভিডিয়োটা শোনালাম। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই বিচারপতির ভেক ধরে, মানুষের সেবা করার নাটক করে তিনি নিজে যে একটা ইমেজ তৈরি করেছিলেন সেই ইমেজটা ভেঙে খান খান হয়ে গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে করা তাঁর আক্রমণের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তিনি নারীবিদ্বেষী ব্যক্তি। আজ যখন এক নির্যাতিতার মুখের উপর তিনি ফোন কেটে দিলেন, তাঁকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন, তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।’
এদিকে এই নিয়ে এই সময় ডিজিটাল-এর তরফে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। প্রশ্ন না শুনেই ফোন কেটে দেন।
কী বলছে BJP?
বিষয়টি নিয়ে তমলুক নগর মণ্ডলের সভাপতি সুকান্ত চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, ‘পুরো ঘটনাটি সাজানো। মহিলার সঙ্গে বর্তমানে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। ঘটনার সময় মহিলা মোর্চার প্রতিনিধিরা পাশে ছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়। পরে ছাড়া পায়। তারপর আবার নতুন করে এই নিয়ে রাজনৈতিক চক্রান্ত করার চেষ্টা চলছে।’