লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গের ভোটযুদ্ধে বিজেপি প্রথম থেকেই সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের মহিলা ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে চাইছে। সেই কৌশল অনুযায়ী, বাংলায় ভোট-প্রচারে এলেই নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা সন্দেশখালি প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বার্তা দিতে চাইছেন যে, বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস আদপে মহিলা বিরোধী।কিন্তু সন্দেশখালির একাধিক স্টিং ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) সামনে আসার পরে নারী নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা বলে তৃণমূলও পাল্টা জোরদার প্রচারে নেমেছে। তাদের দাবি, এই সব ভিডিয়ো থেকেই স্পষ্ট, সন্দেশখালির ঘটনা সবটাই সাজানো। ভোটবাক্সে কোন প্রচারের কতটা প্রভাব পড়বে, সেটা বোঝা যাবে ৪ জুন ফল প্রকাশের পরই। কিন্তু ‘সন্দেশখালি’ নিয়ে যুদ্ধে ঢিলেমি দিতে চাইছে না যুযুধান কোনও পক্ষই।
রবিবার বাংলায় ভোট প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্দেশখালি নিয়ে নতুন দাবি করে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, তৃণমূল এতটাই খারাপ দল যে এখন তারা সন্দেশখালির মহিলাদের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলার রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছে। যদিও তৃণমূলের প্রথম সারির কোনও নেতাকে অন্তত প্রকাশ্যে সেরকম কোনও অভিযোগ তুলতে এখনও দেখা যায়নি।
এদিন পুরুলিয়ার নির্বাচনী সভা থেকে মোদী বলেন, ‘সন্দেশখালিতে যে পাপ হয়েছে, তা পুরো বাংলার মহিলাদের নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। এসসি, এসটি মহিলাদের তৃণমূলের লোকজন মানুষ বলেই মনে করে না। তৃণমূল এখন সন্দেশখালির মা-বোনেদের দোষী প্রমাণ করতে চাইছে। ওদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।’ মোদীর আশা, ভোটবাক্সেই এর জবাব দেবেন বাংলার মহিলারা। তাঁর কথায়, ‘যে ভাষা ওরা সন্দেশখালির মহিলাদের সম্পর্কে প্রয়োগ করছে, তার জবাব বাংলার মহিলারা ভোটবাক্সে দেবে।’
তৃণমূলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরাও ভোট-প্রচারে বেরিয়ে সন্দেশখালির মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনাগুলি বিজেপির সাজানো নাটক হিসেবেই দাবি করছেন। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে সন্দেশখালিতে চক্রান্ত করতে গিয়ে বিজেপি-ই বাংলার মহিলাদের অপমান করেছে।
এদিন কেশপুরের সভা থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘সন্দেশখালির সব ঘটনা সামনে এসেছে। সবাই দেখেছেন, কী ভাবে মহিলাদের অপমান করা হয়েছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল নিজেই বলেছেন, মহিলাদের দু’হাজার টাকা দিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করানো হয়েছে। তৃণমূলকে জব্দ করতেই এটা করা হয়েছে।’
মোদীর মতো অভিষেকও ভোটবাক্সে সন্দেশখালির ঘটনার জবাব চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যাঁরা এ ভাবে সন্দেশখালির মা-বোনেদের অসম্মান করেছেন, তাঁদের জবাব দিতেই হবে।’