কলকাতা মেট্রো,মেট্রোর সমস্ত রুটেই বসছে CBTC সিগন্যালিং ব্যবস্থা, সব করিডোরই ছুটবে মোটরম্যান বিহীন রেক – kolkata metro has decided to install cbtc signalling system in all the corridors


প্রতিদিনই প্রযুক্তি আরও উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কলকাতা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। সেই ধারা অনুসারেই স্পেন , ডেনমার্ক এবং অন্যান্য উন্নত দেশের মেট্রোর মতো কলকাতা মেট্রোতেও কমিউনিকেশন বেসড ট্রেন কন্ট্রোল (CBTC) সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, বর্তমানে এই সিগন্যালিং ব্যবস্থা জোকা থেকে এসপ্লানেড এবং কবি সুভাষ থেকে বিমানবন্দর মেট্রো করিডোরে বসানো হচ্ছে। এর জন্য ব্যয় হবে মোট ৮০০ কোটি টাকা। এই অত্যাধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা অত্যন্ত নিরাপদ এবং ট্রেন পরিচালন ব্যবস্থাকেও আরও সহজ করে তুলবে। স্পেন, ডেনমার্ক সহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশে এই ব্যবস্থা চালু থাকার ফলে মোটরম্যান ছাড়াই মেট্রো রেল চালানো সম্ভব হচ্ছে। এমনকী দিল্লিতেও মোটরম্যান-বিহীন মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে।কলকাতা মেট্রোতেও সিবিটিসি সিগন্যালিং ব্যবস্থায় অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন্স (ATO) মোডে মেট্রো চালানোর সময় মোটরম্যানদের কোনও ভূমিকা থাকে না। এক্ষেত্রে তাঁরা শুধুমাত্র বোতাম টিপে দরজা বন্ধ ও স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার কাজটি করেন। কলকাতা মেট্রোর নয়া করিডোরগুলি ছাড়াও নর্থ – সাউথ করিডোরেও এই সিবিটিসি ব্যবস্থা ইনস্টল করা হচ্ছে। তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে মোট ৫০০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থাকে এই সিগন্যাল বসানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে কলকাতা মেট্রোর সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কে সিবিটিসি সিগন্যালিং ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে।

সিবিটিসি সিগন্যালিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে চালু হয়ে গেলে কলকাতা মেট্রো ট্রেন অপারেটরদের নিয়োগ করবে। এ ছাড়া পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়া হবে। দৈনিক রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সঙ্গে যুক্ত মেট্রো কর্মীরাই ট্রেন অপারেটরের এই কাজ সহজে করে দেবেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, কলকাতা মেট্রোতে অন্যান্য রেলের যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোয় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যোগ্য মোটরম্যানদের মেট্রো চালানোর কাজে নিযুক্ত করা হয়। মেট্রো রেলের প্রয়োজন অনুযায়ী পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে থেকে মোটরম্যানদের ডেপুটেশনে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে কলকাতা মেট্রোয় ৩১ জন মোটরম্যান ৬ মাস ধরে প্রশিক্ষণরত। পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের আরও ১৬ জন মোটরম্যান ট্রেন চালানোর জন্য মেট্রো রেলে আসতে চলেছেন। এছাড়া বিলাসপুর ডিভিশনের ১০ জন মোটরম্যানও আসতে চলেছেন মেট্রোয় । এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ভারতীয় রেলে ৮-১০ বছর বিভিন্ন স্তরে কাজ করার পরেই মোটরম্যানরা যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর দায়িত্ব পান। এই পদে নব-নিযুক্তরা লোকো ড্রাইভারের সহযোগী হিসাবে কিছু বছর কাজ করার পর ‘সান্টার’ পদে উন্নীত হন। সান্দার হলেন তাঁরা, যাঁরা ডিপো থেকে খালি রেক স্টেশনে নিয়ে আসেন। এই সান্টার পদে কিছু দিন কাজ করার পর তাঁরা মালগাড়ি চালানোর দায়িত্ব পান। এরপর অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের অধীনে তাঁদের যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ডেপুটেশনে আসা মোটরম্যানদের পাশাপাশি মেট্রো কর্তৃপক্ষও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত কর্মীদের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সান্টার পদে নিযুক্ত করে থাকে। এর জন্য কাজের অভিজ্ঞতা, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফল এবং ডাক্তারি ফিট সার্টিফিকেটকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই বিষয়ে, মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানান, কোনও কোনও জায়গায় দাবি করা হয়েছে যে এই সান্টাররা মেট্রোতে যাত্রীবাহী ট্রেন চালান, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অসত্য ও প্ররোচনামূলক। তিনি আরও জনিয়েছেন যে, মেট্রো রেলে সান্টাররা কখনই যাত্রীবাহী ট্রেন চালান না, তাঁরা কেবল খালি রেককে ইয়ার্ড থেকে স্টেশনে নিয়ে আসেন। এই সান্টার পদে বেশ কিছু বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জনের পর নির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠির ভিত্তিতে এদের মোটরম্যান পদে উন্নিত করা হয়। এর আগে অবশ্য তাঁরা ফিট কি না তা ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে দেখে নেওয়া হয় এবং অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের অধীনে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হলেই তবে তাঁরা যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর দায়িত্ব পান।

কৌশিক মিত্র আরও জানাচ্ছেন, বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর সিবিটিসি-হীন কোনও সেকশনে ট্রেন চালানোর জন্য কোনও কন্ডাক্টিং মোটরম্যানকে সরানো হয়নি। বরং ট্রেনি হিসাবে অতিরিক্ত মেট্রোকর্মী নিযুক্ত করা হয়েছে। অরেঞ্জ লাইনের কবি সুভাষ থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেশন পর্যন্ত অংশে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যুক্ত কিছু মেট্রোকর্মীকে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা লাভ ও দক্ষতা অর্জনের জন্য কন্ডাক্টিং মোটরম্যানদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সান্টার পদে পদ্দোন্নতির জন্য নেওয়া পরীক্ষায় তাঁরা অনায়াসেই উত্তীর্ণ হতে পারবেন। পরবর্তীকালে প্রয়োজন হলে সমস্ত কারিগরী দক্ষতা ও মানসিক সক্ষমতা যাচাই করার পরই তাঁদের যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর কাজে নিযুক্ত করা হতে পারে। এককথায় বলতে গেলে মেট্রো রেলে যে সমস্ত সুরক্ষাবিধি মেনেই ট্রেন চালান হয়, তা আরও একবরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিআরও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *