মোবাইলের নেশা সর্বনাশা- শোনা যায় হামেশা। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি কাটাতে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয় স্কুলপড়ুয়া খুদেদের। কিন্তু সেই ফেসবুক যে সাফল্যের সিঁড়িতেও এগিয়ে দিতে পারে, সেটাই যেন মালুম হচ্ছে তমলুকের ভোট বাজারে। এই কেন্দ্রে তৃণমূল এবং সিপিএমের যে দুই ক্যান্ডিডেট লড়াই করছেন, তাঁদের প্রাথমিক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দুটোই ফেসবুকের দৌলতে।তাকেই হাতিয়ার করে তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্য ও সিপিএমের সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনে প্রথম ভোটের ময়দানে নেমেছেন। প্রথমটাই একেবারে লোকসভার জন্য। উল্টো দিকে বিজেপির প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এত কাল সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও উপস্থিতিই ছিল না। সদ্য ফেসবুকে নিজের একটি পেজ শুরু করেছেন।
২০১৯-এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম ভাইরাল হন দেবাংশু। ‘মমতাদি আর একবার’ নামে একটি ছড়া কেটেছিলেন। তখন অবশ্য তিনি তৃণমূলের কোনও পদে ছিলেন না। কিন্তু তৃণমূলের সমর্থক হিসেবে তাঁর একের পর এক ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই নেতৃত্বের নজরে পড়েন দেবাংশু। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর তাঁকে দলে সরকারি ভাবে সামিল করা হয়। পরে যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকও করা হয়। ‘২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর ছড়া ‘খেলা হবে’ তৃণমূলের মূল স্লোগান হয়ে ওঠে। আপাতত তিনি আইটি সেলের প্রধানও।
আর এ বার দেবাংশু লোকসভার প্রার্থী। তাঁর বক্তব্য, ‘সোশ্যাল মিডিয়াই আমার রাজনৈতিক কেরিয়ারের সোপান। এই যে প্রচারে আমাকে মানুষ চিনছে, জড়িয়ে ধরছে, স্লোগান দিচ্ছে, এই ভালোবাসা সোশ্যাল মিডিয়ার জন্যই।’ তৃণমূলের প্রতি কৃতজ্ঞ দেবাংশুর সংযোজন, ‘আমি তো কেউ ছিলাম না। দল আমার ভিডিয়ো দেখে, আমার ছড়া দেখে তুলে এনে নানা দায়িত্ব দিয়েছে। যে ছেলেটা কখনও ছাত্র সংসদ নির্বাচন লড়েনি, পুরসভা বা পঞ্চায়েতে লড়েনি, তাকেই প্রথমবার দেশের সরকার গড়ার ভোটে দাঁড় করিয়েছে। এটা তৃণমূল বলেই সম্ভব।’ তিনি তমলুকে প্রার্থী না হলে সিপিএম-ও সায়নকে ওই কেন্দ্রে টিকিট দিত কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে দেবাংশুর।
কেন? কারণ বাম-প্রার্থী সায়নও সোশ্যাল মিডিয়াতেই ভাইরাল। তাঁর এক একটি ভিডিয়োর কয়েক মিলিয়ন ভিউ হয়। শেয়ারের সংখ্যাও ব্যাপক। এই পরিচিতি কি তাঁকে সাহায্য করছে? সায়নের দাবি, ‘প্রচারে বেরিয়ে দেখছি ঘরে ঘরে মানুষ আমাকে চেনে। ইয়ং ছেলেমেয়েরা তো চেনেই, গৃহবধূ থেকে মধ্যবয়সিরাও বলছেন, আমরা আপনার ভিডিয়ো দেখি।’ সায়নও মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই জনপ্রিয়তা তাঁকে টিকিট পেতে সাহায্য করেছে। পাশাপাশি, আইনজীবী হিসেবে আদালতে তাঁর লড়াইকেও স্বীকৃতি দিয়েছে দল।
এ সবের মধ্যেই আছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ। অতীতে বিচারপতি হিসেবে তাঁর নানা মন্তব্য ও নির্দেশ ঘিরে তপ্ত থেকেছে সোশ্যাল মিডিয়া। তিনি সেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকলেও ভোটের ময়দানে নেমে আর বিমুখ থাকতে পারলেন না। গত ৪ এপ্রিল ফেসবুকে পেজ খোলেন অভিজিৎ। একটি পোস্ট করে লেখেন – ‘এটা আমার প্রথম ফেসবুক পোস্ট…।’ এরপর ওই পেজে তাঁর নানা কর্মসূচির ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। তিনি কি নিয়মিত ফেসবুক করেন? স্পষ্ট জানাননি অভিজিৎ। তবে তাঁর কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি আমার কর্মসূচি বলতে পারব না। আমি নিজেও ফেসবুক থেকে জানতে পারি, কী কর্মসূচি রয়েছে!’