কয়েক দিন আগে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। মালা তাঁর হলফনামায় অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে কমিশনে লিখিত অভিযোগ জানায় বিজেপি। বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও মনোনয়ন দাখিলের সময়ে ‘নো ডিউজ় সার্টিফিকেট’ জমা না-দেওয়ার অভিযোগ করেছিল পদ্ম শিবির।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, সম্ভবত সেই বিতর্কের জেরেই রেশমি কমল এবং দিব্যা লঙ্গনাথনকে ভোটের ডিউটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। কমিশনের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে অফিসারদের অনেক সময়ে ভোটের ডিউটি থেকে সরানো হয়। এর আগেও বহু অফিসারকে সরানো হয়েছে। শুধু বিজেপি নেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে সরানো হয়েছে এমনটা নয়। তৃণমূল অভিযোগ করার পরে পরবর্তীকালে তাঁকে সরানো হয়েছে, এমন অনেক নজির রয়েছে।’
কিন্তু বিতর্ক থামছে না। গত ১৯ মে মেদিনীপুরের একটি হোটেল থেকে বিজেপি নেতা সমিত মণ্ডলকে হিসেব বহির্ভূত নগদ ৩২ লক্ষ টাকা সমেত আটক করে জেলা পুলিশ। ধৃত ব্যক্তি মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ওই ঘটনার পরেই পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারকে বদলির নির্দেশ দেয় কমিশন।
এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কমিশনকে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন। তৃণমূলের দাবি, ভোটের সময়ে বিজেপি নেতার থেকে বেআইনি টাকা উদ্ধার করার জন্যই তাঁর উপরে কোপ পড়েছে। গত রবিবার পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস, ভূপতিনগর থানার ওসি গোপাল পাঠক এবং পটাশপুর থানার ওসি রাজা কুণ্ডুকেও ভোটের ডিউটি থেকে সরিয়ে দিয়েছে কমিশন।
তার আগে সরানো হয়েছে কলকাতা পুলিশের ডিসি-সাউথ ওয়েস্ট সৌম্য রায়কে। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘অনেক সময়ে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি নেতারা কোনও সরকারি অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পরই কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা দেখে মনে হতে পারে নির্বাচন কমিশন হয়তো বিজেপির কথায় চলছে। অন্যায় ভাবে কাউকে বদলি করলে তার মনোবল ভেঙে যায়। তাতে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হয়।’
বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়ার যুক্তি, ‘বিজেপি-শাসিত রাজ্যেও বহু অফিসারকে বদলি করা হয়েছে। কমিশন যাঁকে মনে করবে, তাঁকে বদলি করতে পারে। এ নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করা হচ্ছে।’