এই সময়, কৃষ্ণনগর: কোদাল দিয়ে মাটির বড় বড় চাঙড় কেটে যে যার মাথায় নিয়ে দলবেঁধে উপরের দিকে উঠছেন গ্রামের মহিলারা। পঞ্চায়েত এলাকায় একশো দিনের কাজে কোনও পুকুর খনন নয়। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের গয়েশপুর সগুনা গ্রামে এ ছবি এক লোকদেবীর পুজোকে ঘিরে। বড় বড় গাছে ঘেরা উঁচু জমিতে ভক্তিভরে সেই মাটির চাঙড়গুলো রেখে আসছেন তাঁরা। সাত সকালে গ্রামের পুকুরে স্নান সেরে মাটির পাহাড়কে এভাবে আরও উঁচু করলেন মহিলারা। ফি-বছর একই জায়গায় মাটির চাঙড় জড়ো করতে করতে এখন তা বড় টিলার আকার নিয়েছে। প্রায় দেড়শো বছর ধরে গয়েশপুর পঞ্চায়েতের সগুনা গ্রামে এ পুজো চলে এলেও দেবীর নাম কেন নন্দিনী তা অবশ্য গ্রামের কেউই বলতে পারেননি।কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপিকা কাকলি ধারা মণ্ডল বলেন, ‘বাংলার গ্রামে এরকম পুজোর চল বেশ কিছু জায়গায় আছে। অঞ্চল ভেদে হয়তো দেবদেবীর নাম আলাদা। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বা খরার সময়ে নদী, খাল, বিল বা পুকুরে জল শুকিয়ে যায়। পরে সেখানে আরও বেশি জল পাওয়ার আশায় সেই নদী বা পুকুরের মাটি কেটে রাখতে দেখা যায়। মাটির চাঙড় তুলে বড় কোনও গাছের গোড়ায় ফেলে মাটির উঁচু ঢিবি গড়েন গ্রামবাসীরা। যাতে গ্রামে নদী বা পুকুরের জল বাড়লে বা গ্রামে বন্যা হলে গাছের ছায়া ঘেরা সেই উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে পারেন তাঁরা।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামের খাল, বিল, পুকুরে গরমের সময়ে জল থাকলে সংলগ্ন চাষজমির উর্বরতা বাড়ে। শান্তিপুরের গ্রামে এ রকম ভাবনা থেকেই পুজো হয়ে আসছে বলে বলে আমার মনে হয়েছে। তবে লোকদেবীর নাম এখানে কেন নন্দিনী জানা নেই। নন্দিনী মানে তো কন্যা। হয়তো উঁচু ঢিবির উপরে থাকা গাছদেবীকে কন্যারূপে পুজো করেন তাঁরা।’
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী বলেন, ‘দেড়শো বছর ধরে সগুনা গ্রামে এই পুজো চলে আসছে।’ গয়েশপুর পঞ্চায়েতের স্থানীয় মেম্বারের স্বামী বিজেপির তাপস সর্দার বলেন, ‘এখান দিয়ে এক সময়ে ছাড়ি গঙ্গা বইত। এখন এখানে গর্ত, ডোবা থাকলেও গরম কালে চাষের কাজের জলের বড্ড অভাব হয়। এই সময়ে গর্ত ও নীচু জমির মাটি কেটে রাখলে পরে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা হয়। সম্ভবত এ কারণেই পূর্ব পুরুষরা পুকুরের মাটি কাটা শুরু করেছিলেন। আর একই সঙ্গে লোকদেবীকে সন্তুষ্ট করতে ও তাঁর আশীর্বাদ পেতে পুজো শুরু হয়।’
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী বলেন, ‘দেড়শো বছর ধরে সগুনা গ্রামে এই পুজো চলে আসছে।’ গয়েশপুর পঞ্চায়েতের স্থানীয় মেম্বারের স্বামী বিজেপির তাপস সর্দার বলেন, ‘এখান দিয়ে এক সময়ে ছাড়ি গঙ্গা বইত। এখন এখানে গর্ত, ডোবা থাকলেও গরম কালে চাষের কাজের জলের বড্ড অভাব হয়। এই সময়ে গর্ত ও নীচু জমির মাটি কেটে রাখলে পরে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা হয়। সম্ভবত এ কারণেই পূর্ব পুরুষরা পুকুরের মাটি কাটা শুরু করেছিলেন। আর একই সঙ্গে লোকদেবীকে সন্তুষ্ট করতে ও তাঁর আশীর্বাদ পেতে পুজো শুরু হয়।’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাজার চারেক মানুষ পুজো দিতে জড়ো হয়েছিলেন এখানে। এদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা। কেউ আবার কোলের বাচ্চাকে এক হাতে ধরে অন্য হাতে মাটির চাঙর মাথায় নিয়ে মাটির পাহাড়ে ওঠেন পুজো দিতে। পুরোহিত ছাড়াই গাছতলায় যে যাঁর মতো করে পুজো করেন। বিকেলে হয় মহোৎসব। এক মহিলা ভক্ত বলেন, ‘চাষের কাজে বাধা কাটাতে এ দেবীর কাছে মানত করা হয়। আবার ব্যক্তিগত বিভিন্ন অসুস্থতা কাটাতেও দেবীর কাছে মানত করা হয়।