Lok Sabha Election 2024,মাত্র ৫ মিনিট দেরি হলে বিস্ফোরণে উড়ে যেত গাড়ি – presiding officer teacher soumitra dubey still remembers the maoist attack during 2009 lok sabha polls in jhargram


অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
সালটা ২০০৯। তারিখ ৩০ এপ্রিল। লোকসভা ভোট। প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব নিয়ে ডিউটিতে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম ননীবালা বিদ্যালয়ের সহশিক্ষক সৌমিত্র দুবে। সেদিনের ভোটের ডিউটির কথা মনে পড়লে এখনও ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায় তাঁর শিরদাঁড়া দিয়ে। ওই বুথেই ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুলিশকর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। দু’জন পুলিশকর্মীর প্রাণও গিয়েছিল সেই হামলায়।একজন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে, অন্যজন হাসপাতালে যাওয়ার পথে রাস্তায় মারা গিয়েছিলেন। এ বারও লোকসভা ভোটে সৌমিত্রর ডিউটি পড়েছে বেলপাহাড়ি ব্লকের ওড়গোন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এবারও প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব। ভোটের ডিউটি পড়লেই তিনি ফিরে যান সেই দিনটিতে।

ঝাড়গ্রামের নার্সিংহোম থেকে ২৯ এপ্রিল সকালে স্ত্রী ও সদ্যোজাতকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে ভোটের ডিউটিতে বেরিয়ে পড়েছিলেন সৌমিত্র। রাস্তায় নেমে বার বার পিছনে ফিরে তাকাচ্ছিলেন ঘরের দিকে। তিন দিনের সন্তানকে কোলে নিয়ে তখন করুণ মুখে দরজায় দাঁড়িয়ে তাঁর স্ত্রী। শুধু বলেছিলেন ‘সাবধানে থেকো।’ নিজেকে সামলে সৌমিত্র ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে রিসিভিং সেন্টারে পৌঁছে দেখেন, পরিচিতরা অনেক আগেই ভোটের কাগজপত্র বুঝে নেওয়ার জন্য চলে এসেছেন।

যে যার মতো খোশগল্প করছেন। সৌমিত্র তখন অন্যজগতে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে ছেলের কচি মুখটা। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তাঁকে বেলপাহাড়ির ব্লকের তালপুকুরিয়া ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগে সদ্য পৃথিবীর আলো দেখেছে আমার সন্তান। করুণ মুখে তাকিয়ে রয়েছেন স্ত্রী। সেই ছবির ভিড়ে ভোটকর্মীদের নিয়ে বিকেলে পৌঁছে গিয়েছিলাম বেলপাহাড়িতে। আধা সামরিক বাহিনী ও তাঁদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র দেখে একটু ভরসা পেয়েছিলাম। পোলিং পার্সোনালদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বেলপাহাড়ি এসসি হাইস্কুলে। রাত দশটায় আধা সামরিক বাহিনীর ক্যান্টিনে রাতের খাবার ছিল ভাত, মাংসের ঝোল ও পান্তুয়া। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য রাত তিনটের সময়ে গাড়ি ছাড়ার সময় জওয়ানরা একসঙ্গে বলে ওঠেন জয়হিন্দ।’

বড় রাস্তায় পৌঁছনোর পরে প্রায় সাত-আট কিমি পায়ে হেঁটে ভোটকর্মীদের নিয়ে সৌমিত্রকে যেতে হয়েছিল ভোটকেন্দ্রে। পুকুরিয়া, তালপুকুরিয়া ও চড়কপাহাড়ির ভোটকেন্দ্র গুলিতে যাওয়ার জন্য সকলেই একসঙ্গে অন্ধকারে পা ফেলছেন অরণ্যের পথে। জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে তখন ভোরের আলো রাঙা আবিরের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।

সকাল সাতটা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত ত্রিস্তর জওয়ানদের ঘেরাটোপে ভোট শেষ হয়। সন্ধ্যায় কাজ শেষ করে ভোটবাক্স নিয়ে সকলে রওনা দেয় রিসিভিং সেন্টার অর্থাৎ ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের উদ্দেশে। রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য তালপুকুরিয়া ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে দেহাতি একজন তাঁদের জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে নীচে নামেন। তাঁকে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা অবস্থায় লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

ভোটের আগের দিন সৌমিত্র খাঁর বিরুদ্ধে ‘বালি মাফিয়া’ পোস্টার, অস্বস্তিতে BJP

সৌমিত্র বলেন, ‘রাতে যখন ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে পৌঁছে ভোটবাক্স জমা দিচ্ছি, তখন আমার মোবাইলে একের এক ফোন আসতে শুরু করেছে। হঠাৎ কী হলো? আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুরা এত ফোন করছে কেন? প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তাঁরাও কিছু বলেনি। আমি ভালো আছি কিনা সকলেই জানতে চাইছিল। সবাই যখন শুনল, আমি রাজ কলেজে ভোটের বাক্স নিয়ে পৌঁছে গিয়েছি, তখন বলল ঠিক আছে, বাক্স জমা দিয়ে ঘরে চলে আয়। আর কিছু বলেনি।

বাড়িতে এসে টিভির পর্দায় দেখি কুশবনির জঙ্গলে সেক্টর অফিসারের গাড়ি মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইনে উড়ে গিয়েছে। সময়টা হিসেব করে দেখলাম, ঠিক পাঁচ মিনিট আগে আমাদের গাড়িটা ওই রাস্তা দিয়ে এসেছে! পাঁচ মিনিট আগে হলেই সবকিছু উলটপালট হয়ে যেত। এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরে দেখি, স্ত্রী ও সন্তান অঘোরে ঘুমোচ্ছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *