হুডখোলা জিপ। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু’পাশে বঙ্গ-বিজেপির দুই স্তম্ভ সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী। তাঁদের পিছনে কলকাতা উত্তরের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় এবং দমদমের প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত। মোদী ছাড়া সকলের হাতেই ‘আলো জ্বলা পদ্ম-প্রতীক’।কলকাতা বহু রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সাক্ষী। কংগ্রেস জমানা থেকে আজকের তৃণমূল শাসন-এ সবই দেখেছে শহর। অতীতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর রোড শো-ও দেখেছে তিলোত্তমা। কিন্তু মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদীর রোড শো-কে কেন্দ্র করে যে জাঁকজমক ছিল তা এক কথায় অভূতপূর্ব।
শেষ দফা নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার কলকাতায় প্রথম রোড শো করলেন মোদী। ঠিক ছিল ছ’টা নাগাদ তাঁর রোড শো শুরু হবে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি পাদদেশ থেকে। এদিন প্রধানমন্ত্রীর গন্তব্য ছিল সিমলা স্ট্রিটে বিবেকানন্দর বাড়ি। বিধান সরণির দু’পাশে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভিড় তো ছিলই, এমনকী মোদীকে দেখার জন্য রাস্তার দু’পাশে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু সাধারণ মানুষও।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই বিধান সরণির দু’পাশে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়। বিজেপিও গোটা রাস্তা মুড়ে ফেলে দলীয় পতাকা, ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ডে। তাৎপর্যপূর্ণ হলো, মোদীর রোড শো উপলক্ষে বিধান সরণির দু’পাশ যেভাবে সাজিয়েছিল বিজেপি, তাতে বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া রাখার মরিয়া চেষ্টা ছিল। কারণ, ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে উত্তর কলকাতায় অমিত শাহের রোড শো’র পরে ভাঙা হয়েছিল বিদ্যাসাগরের মূর্তি। যা থেকে বিজেপির গায়ে সেঁটে গিয়েছিল বাঙালি বিরোধী তকমা।
শ্যামবাজারে প্রধানমন্ত্রী হাজির হন ঠিক সন্ধ্যা সাতটা দশ মিনিটে। সুভাষচন্দ্রের মূর্তিতে মালা দিয়ে হুডখোলা জিপে উঠে পড়েন তিনি। ডেকে নেন সুকান্ত-শুভেন্দু এবং উত্তর কলকাতা ও দমদমের বিজেপি প্রার্থীদেরও। বিধান সরণির উপর মোদীকে দেখা মাত্রই রাস্তার দু’পাশে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষের মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বলে ওঠে। প্রধানমন্ত্রীও হেসে হাত নাড়েন সবার উদ্দেশে। তাঁর জিপ ধীর গতিতে এগিয়ে চলে সিমলা স্ট্রিটের দিকে।
তবে এদিন রোড শো শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী যান বাগবাজারে সারদা মা-র বাড়িতে। সেখানে পুজো দেন। সন্ন্যাসীদের সঙ্গেও কথা বলেন। সারদাদেবীর বাড়ির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে প্রসাদী শাল, ধুতি, চাদর এবং ছবি তুলে দেওয়া হয়। সেখানেও মোদীকে দেখার জন্য সাধারণ মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আগেই বলেছিলেন যে, মঙ্গলবারের রোড শো ঐতিহাসিক হতে চলেছে।
এদিন প্রধানমন্ত্রী রোড শো শেষ করার পরে উত্তর কলকাতার এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘শেষ মুহূর্তে তাপস রায়ের প্রচারে ঝড় তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তাপসদাকে হারানো কঠিন।’ এদিকে, এদিনই বেহালার সভা থেকে মোদীকে আক্রমণ করে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’নেতাজির জন্মদিন জাতীয় ছুটির দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি আমি ১৫ বছর ধরে করছি। তোমরা সেটা করলে না। এখন নেতাজির মূর্তিতে মালা দেওয়া হচ্ছে! লজ্জা করে না। নেতাজিকে আজ পর্যন্ত এরা সম্মান দিয়েছে? নেতাজির ভাবনায় প্ল্যানিং কমিশন ছিল, নরেন্দ্র মোদী তা উঠিয়ে দিয়েছেন।’