মাত্র মাস ছয়েক আগেও তাঁর নির্দেশ ছাড়া একটা পাতাও নড়ত না সন্দেশখালিতে। সুন্দরবন লাগোয়া নদীঘেরা দ্বীপ এলাকা সন্দেশখালির সেই বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান এখন জেলে। অনেক বছর পর শাহজাহানকে ছাড়াই একটি নির্বাচন লড়তে নেমেছে শাসক দল তৃণমূল। শাহজাহানের অনুপস্থিতি কতটা ছায়া ফেলবে ভোটে?তৃণমূলের দাবি, বসিরহাট লোকসভার সাতটি বিধানসভার একটি কেন্দ্র সন্দেশখালি। তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম বলছেন, ‘সন্দেশখালি ছোট ঘটনা। বসিরহাট লোকসভায় তার কোনও প্রভাব পড়বে না। ২০১৯ সালে এই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে আমি যখন জিতি তখন শাহজাহান সিপিএমে ছিল। তখনও আমি মানুষের ভোটে জিতেছিলাম, এ বারও মানুষের ভোটেই জিতব।’
কিন্তু বিরোধীরা শাসকের এই দাবি মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, শুধু সন্দেশখালি নয়, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, ও মিনাখাঁ এলাকাতেও শাহজাহানের না থাকার প্রভাব ভোট-বাক্সে পড়বে।
কী ভাবে?
গত এক দশক ধরেই সন্দেশখালি ও আশপাশের কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট নিয়ন্ত্রণ করতেন শাহজাহান। সিপিএম আমলেই তাঁর উত্থান ও দাপটের শুরু। ২০১১ সালে পালাবদলের পর তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নজরে পড়ে শাসক শিবিরে ভিড়ে যান তিনি। ক্ষমতার হেরফের হয়নি সন্দেশখালির বাঘের।
এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ ও মিনাখাঁয় তৃণমূলের হয়ে ভোট সেনাপতির কাজ করতেন শাহজাহান। তাঁর নির্দেশেই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াত বাইক বাহিনী। অভিযোগ, বিরোধীরা যেন ভোটের দিন বুথে পৌঁছতে না পারে, সেটা বাহিনীর সদস্যরা কখনও বোমা হাতে, কখনও বন্দুক দেখিয়ে নিশ্চিত করত।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাটের প্রার্থী হিসেবে টলিউডের নায়িকা নুসরত জাহানের নাম ঘোষণা করা হয়। নুসরত তৃণমূল প্রার্থী হওয়ার পর প্রথম জনসভা করতে গিয়েছিলেন সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায়। সেই সরবেড়িয়া, যেখানে বাড়ি শাহজাহানের। গত ৫ জানুয়ারি যেখানে রেশন দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি অফিসাররা।
সরবেড়িয়ায় নুসরতের সেই সভায় বারবার এলাকার তৎকালীন বিধায়কের হাত থেকে মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভাষণ দিতে দেখা গিয়েছিল শাহজাহানকে। নিন্দুকে বলে, সন্দেশখালির পঞ্চায়েত স্তর থেকে লোকসভা পর্যন্ত কে প্রার্থী হবেন, কে ভোটে জিতবেন তাতে জোরালো মতামত থাকত তাঁর।
ইডির উপর হামলার ৫৬ দিন পর গ্রেপ্তার হয়েছেন শাহজাহান। দীর্ঘদিনের সাজানো রাজ্যপাট ভেঙে পড়েছে তাসের ঘরের মতো। দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁকে। ছোট ভাই শেখ আলমগীর, ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লার মতো একাধিক অনুগামীও গারদের ওপারে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বারবার প্রচারে আনছেন শাহজাহানের নাম।