লোকসভা নির্বাচন 2024: হেঁটে না গাড়িতে, রোড শোয়ে সার কথা ব্র্যান্ডিং – three months lok sabha election 2024 battle ends on saturday


প্রায় তিন মাসের যুদ্ধ শেষ হচ্ছে শনিবার। শেষ দফার ভোটের আগে সব দলই ঝড় তুলেছে প্রচারে। এ দফায় কলকাতা আর শহরতলির মানুষ পর পর দেখছেন নেতানেত্রীদের রোড শো। গত দু’দিনে ৪-৫টি বড় রোড শো হয়েছে। কেউ গাড়িতে চেপে রোড শো করেছেন। কেউ ভরসা রাখছেন হাঁটায়। কোনটিতে জনসংযোগ বেশি, তা নিয়ে তরজাও চলছে রাজনৈতিক মহলে।মঙ্গলবার অশোকনগর এবং শ্যামবাজার থেকে সিমলা স্ট্রিট হুডখোলা জিপে রোড শো করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের অন্যত্রও যত রোড শো করেছেন মোদী, সবই গাড়িতে। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মঙ্গলবার বিরাটি এবং এন্টালিতে দু’টি রোড শো করেছেন। বুধবারও রোড শো করেছেন মমতা শ্যামবাজারে।

সর্বত্রই নিজের ‘সিগনেচার স্টাইল’ বজায় রেখে হেঁটেই জনসংযোগ সেরেছেন তৃণমূলনেত্রী। আবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত গাড়ি বা বাসে চেপেই রোড শো করছেন। এরই মধ্যে বামপ্রার্থীরা এক বিকল্প খুঁজে বের করেছেন। যাদবপুরের সৃজন ভট্টাচার্যই হোন বা তমলুকের সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়—অনেক সময়ে এঁরা সওয়ারি হয়েছেন টোটোয়।

কিন্তু কোনটায় ভোটারদের কাছে পৌঁছনো যায় বেশি? উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের সমর্থনে মঙ্গলবার হুডখোলা জিপে রোড শো করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তাপস নিজে কিন্তু হাঁটাতেই জোর দিচ্ছেন। কেন? তাপসের কথায়, ‘হেঁটে প্রচার করলে বহু মানুষের সঙ্গে দেখা, পরিচয় হয়। দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে কথা বলা যায়। গাড়িতে সেটা হয় না।’ ফেলে আসা দলের নেত্রীকে দেখিয়ে তাপসের সংযোজন, ‘দেখছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উত্তর কলকাতায় সমানে হাঁটতে হচ্ছে। কারণ ওঁর প্রার্থী তো গাড়ি থেকে নামছেনই না!’

তৃণমূলের অনেকেও মোদী, মমতার রোড শোয়ের ফারাকটা তুলে ধরছেন। দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষ ঘর্মাক্ত মুখ্যমন্ত্রীর একটি ছবি শেয়ার করে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘দিদি মোদীজির মতো নন। তাঁর মতো হেলিকপ্টার থেকে নেমেই হুডখোলা জিপে উঠে পড়েন না। মানুষের সঙ্গে হেঁটে চলেন মাইলের পর মাইল।’

তৃণমূলের অনেক প্রার্থীকেও অবশ্য মূলত গাড়িতে চেপেই প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে। দমদমের সৌগত রায় বা দক্ষিণের মালা রায়রা গাড়িতেই প্রচার সারছেন। যদিও মঙ্গলবার মমতার সঙ্গে হেঁটেছেন সৌগত। অনেকের বক্তব্য, সৌগত, মালাদের ক্ষেত্রে বয়সটাও ফ্যাক্টর। মালা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর হাঁটাটাই অভ্যেস। তিনি নিজেকে সারা বছর ফিট রাখেন, সুস্থ রাখেন। আমি অবশ্য বেশি ভিড় হলে গাড়িতেই প্রচার প্রেফার করি। তাতে অল্প সময়ে অনেকটা জায়গা কভার করা যায়। তবে যে সব সরু গলিতে গাড়ি ঢোকে না, সেখানে হেঁটেই প্রচার করছি।’

আর ঠিক এই জায়গাতেই তৃতীয় মাত্রা যুক্ত করছেন বামেরা। তমলুকের বামপ্রার্থী সায়ন জানাচ্ছেন, তিনি প্রথম এক মাস দিনে গড়ে ১০-১২ কিলোমিটার হেঁটেই প্রচার করেছেন। তার পর বেছে নিয়েছেন টোটো। কেন? সায়নের কথায়, ‘বেশ কয়েক দিন হাঁটার পর বুঝতে পারছিলাম এত বড় এলাকা এই ভাবে কভার করা সম্ভব নয়। আমি এমনিতেই ফ্যান্সি রোড শোয়ের বিরুদ্ধে। ভরসা রেখেছি টোটোয়। টোটোর সঙ্গে মানুষ নিজেকে কানেক্ট করতে পারেন। আর সেটা সস্তাও।’

Mamata Banerjee : বিজেপি নেতার গাড়িতে টাকা, দিদির তোপ, দেবের কর্মা-তিরে

ব্র্যান্ডিং, ক্যাম্পেনিং নিয়ে গবেষণা করেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফরেন ট্রেডের অধ্যাপক সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘এক-একটি রাজনৈতিক দলের এক-এক রকম ব্র্যান্ডিং হয়। মোদীর ব্র্যান্ডিংটাই গাড়ি, হেলিকপ্টার–এই ভাবে হয়েছে। ঠিক তার উল্টো মমতার। তাই আজ হঠাৎ মোদী হাঁটলে অথবা মমতা গাড়িতে চেপে প্রচার করলে তাঁদের ব্র্যান্ডভ্যালুটাই কমে যাবে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্রের সংযোজন, ‘হাঁটা হোক বা গাড়িতে প্রচার, লোকে কিন্তু রিপোর্ট কার্ড দেখেন এবং প্রতিশ্রুতি বিচার করেই ভোটটা দেবেন!’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *