সপ্তম দফার ভোটের আগে আচমকা সিবিআইয়ের তৎরতা নিয়ে এ দিন বারুইপুরের সভায় মমতা বলেন, ‘কালকে (মঙ্গলবার) মধ্যরাতে বেচারা শওকতের মতো ছেলেকেও মধ্যরাতে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। বলেছে, কালকে (বুধবার) এসে দেখা করতে হবে। এটা কি জমিদারি, যে দেখা করতে হবে? এখন নির্বাচন করবে, না তোমাদের বাড়ি যাবে দেখা করতে? লজ্জা করে না!’
বারুইপুরে মমতার সভায় শওকত মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। মমতা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ককে কাছে ডেকে বলেন, ‘শওকত বাঘের বাচ্চা, লড়াই করবে! আমরা সবাই ওর সঙ্গে আছি থাকব। অদিতি মুন্সির বর দেবরাজকেও নোটিস পাঠিয়েছে। এত ভয় কীসের? সবাই চোর?’ তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য ৪ জুনের আগে হাজিরা দিতে পারবেন না বলে সিবিআইকে জানিয়েছেন শওকত।
তিনি বলেন, ‘এটা বিরোধী রাজনৈতিক দলের চক্রান্ত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক আচরণ।’এর আগেও দু’বার কয়লা পাচার মামলায় শওকতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। শওকতের পাশাপাশি আইনজীবী মারফত সিবিআইকে দেবরাজ জানিয়েছেন, আগামী ১ জুন বারাসত কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচন। তাই এই পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। সময় দেওয়া হোক।
দেবরাজের কথায়, ‘নির্বাচনের কারণে এখন যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছি। এর আগেও তদন্তে সহযোগিতা করেছি।’ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর অবশ্যই তিনি যাবেন বলে জানিয়েছেন বিধাননগরের ওই মেয়র পারিষদ। গত বছরের নভেম্বর মাসে দেবরাজের দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা। দু’বার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সিবিআই। প্রথম থেকেই দেবরাজ দাবি করেছেন, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে কোনও ভাবেই তিনি জড়িত নন।
যদিও সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃতদের জেরা করে দেবরাজের বিষয়ে কিছু তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েও কয়েকজনের অ্যাডমিট কার্ড-সহ বেশ কিছু নথি মিলেছে। সেই নথির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তলব করা হয়েছে ওই তৃণমূল নেতাকে।
যদিও ভোটের আগে এই তলব পরিকল্পিত বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মেটিয়াবুরুজের সভায় মমতা বলেন, ‘যাঁরা সিবিআই-ইডির অফিসার, তাঁরা মনে রাখবেন, মোদীবাবুর দল চিরকাল থাকবে না। ভোটের সময়ে এমন অন্যায় করবেন না। ভোটের সময়ে প্রচারে কাউকে বাধা দেওয়া যায় না। প্রচারের আগে কাউকে তুলে নেওয়া যায় না।’
সিবিআইয়ের এই সক্রিয়তার পাশাপাশি এদিনই উত্তর কলকাতার কয়েকটি জায়গান অভিযান চালিয়েছেন আয়কর দপ্তরের অফিসাররা। বড়বাজারের পোলট্রি ব্যবসা রয়েছে, এমন এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে এদিন সকাল ১১টা নাগাদ পৌঁছে যান আয়কর দপ্তরের অফিসাররা। আয় বহির্ভূত সম্পত্তি ওই ব্যবসায়ীর রয়েছে কি না, তা জানতেই এই অভিযান বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর।
বড়বাজার ছাড়াও একবালপুর থানা এলাকার এক বাসিন্দার কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ময়ূরভঞ্জ রোডের ওই বাসিন্দা একটি ব্যাগ নিয়ে বড়বাজারের এসেছিলেন। মনোজ সোনি নামে ওই ব্যবসায়ীকে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। শুরু হয় তল্লাশি, উদ্ধার হয় টাকা, যার কোনও বৈধ নথি না দেখাতে পারায় তাঁকে আটক করা হয় এবং আয়কর বিভাগকে খবর দেওয়া হয়।