Purulia Jharbagda Forest: নেড়া পাহাড়ে মানুষের গড়া অরণ্যই এখন শিক্ষক – purulia jharbagda hill become a man made forest now


যা ছিল রুক্ষ, নেড়া পাহাড়ি টিলা, ভোলবদলে এখন তা ঘন সবুজ। ২৬৭ একর এলাকা জুড়ে এখন জঙ্গল। রয়েছে ৬৭ রকমের উদ্ভিদ আর প্রচুর পশু-পাখি। মানুষই এই রূপবদলের কারিগর। সেই অরণ্যই এখন প্রকৃতির পাঠ দিচ্ছে পড়ুয়াদের।পুরুলিয়ার মানবাজারের ঝাড়বাগদার জঙ্গলে গিয়ে অবাক না হয়ে পারছে না খুদে পড়ুয়া থেকে কলেজ ছাত্র। এ-ও কি সম্ভব? মাত্র ২৪ বছরে নেড়া পাহাড় আর ঊষর ভূখণ্ড এখন গহন অরণ্য! মানবাজার শহর থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরের সেই ঝাড়বাগদা এখন শিক্ষার্থীদের ভ্রমণতীর্থ। পড়ুয়ারা এখানে নিচ্ছে প্রকৃতির পাঠ। সম্প্রতি সামার প্রজেক্টে পড়ুয়াদের নিয়ে ঝাড়বাগদায় এসেছিলেন মানবাজারের রাধামাধব ইনস্টিটিউশনের টিচার ইন-চার্জ প্রদীপকুমার চন্দ্র। গ্রীষ্মের ছুটিতে সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির ৪৫ জন ছাত্রকে নিয়ে সারা দিন পাহাড়ের পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন শিক্ষকরা। চেয়েছিলেন, মানুষের হাতে গড়ে ওঠা এই অরণ্য থেকেই প্রকৃতির পাঠ রপ্ত করুক ছাত্ররা। টিচার ইন-চার্জ বলেন, ‘ছুটির অবকাশে ছাত্রদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে যাওয়ার রীতি রয়েছে। বহু দূরে না গিয়েও ঘরের কাছে প্রকৃতির এমন পাঠশালা পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়।’ শিক্ষকরা শুধু অরণ্যের সঙ্গে ছাত্রদের পরিচয়ই করাননি গাছ লাগিয়ে প্রতিপালনের ভূমিকাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা এ বছর পাঁচটি করে গাছ শুধু লাগাবে না, তাদের বড়ও করে তুলবে। এই অরণ্যই ওদের শিক্ষক।’ ভূগোলের শিক্ষক জয়ন্ত দত্ত বলেন, ‘মে মাসে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। অথচ ঝাড়বাগদার অরণ্যে ছাত্রদের এতটুকু গরম লাগেনি। গাছের মাহাত্ম্য এমনই।’

১৯৯৯ সাল নাগাদ স্থানীয় গ্রামবাসী এলাকাটিকে সবুজ করার উদ্যোগ নেন। একটি সংস্থার সহযোগিতায় পুরুলিয়ার মাটি এবং প্রকৃতির জন্য উপযুক্ত গাছ বসানোর কাজ শুরু হয়। সেই গাছের প্রতিপালন করতে থাকেন গ্রামবাসী। ১০ বছরে ছবিটা বদলাতে শুরু করে। শাল, মহুয়া, বট, অশ্বত্থ, অশোক, কেন্দ, পিয়াল, আম, কাঁঠাল, ডুমুর, কালমেঘ, নিম, গুলঞ্চ, অর্জুনের মতো গাছে এখন চারপাশ শুধুই সবুজ। ঠিক হয়, পরের ১০ বছরে আরও গাছ বসানো হবে। কাটা হবে না একটিও পুরোনো গাছ। জঙ্গল তৈরি হওয়ায় টিলায় আস্তানা গেড়েছে হায়না, শেয়াল, নেকড়ে, খরগোশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। তাদের বংশবিস্তারও ঘটছে। এলাকাটি পুরুলিয়ার কংসাবতী উত্তর বনাঞ্চলের অন্তর্গত। এই ডিভিশনের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট মিটিংয়ে এখানকার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়। পুরুলিয়া জেলায় বন্যপ্রাণের দিক থেকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে অঞ্চলটি। টিলা, ডুংড়িগুলোয় নেকড়ে, হায়নার প্রচুর শেল্টার তৈরি হয়েছে। বন দপ্তরের নজরদারিও রয়েছে এখানে।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অতীতে জলের আকাল লেগেই থাকত গ্রামে। এখন এলাকার কুয়োগুলোয় জল থাকে। হয় পর্যাপ্ত বৃষ্টি। অরণ্যের পাঠা নেওয়া নবম শ্রেণির ছাত্র অর্পণকুমার দেশমুখ বলে, ‘একটা নেড়া পাহাড়কে যে ঘন জঙ্গলে পরিণত করা যায় তা নিজের চোখে দেখলাম। বুঝলাম, শুধু গাছ লাগালেই হবে না তার রক্ষণাবেক্ষণও সমান জরুরি। এই পাহাড়ে আবার আসব।’ স্কুলের ছাত্র উত্তম সিং, সঞ্জয় মাহাতোর কথায়, ‘প্রকৃতির শিক্ষা পাওয়া গেল মানুষের তৈরি অরণ্যতে। এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’

ঝাড়বাগদা গ্রামের বাসিন্দা সুজিত কুমার মহান্তির কথায়, ‘আমাদের তৈরি বন যেন এখন নিজেই এক শিক্ষক। যে নতুন প্রজন্মের কাছে হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিচ্ছে গাছ প্রকৃতির কাছে কতটা অপরিহার্য।’ গ্রামবাসী অর্পিতা মহান্তির কথায়, ‘গাছ লাগানো নতুন কিছু নয়। আসল ব্যাপার হলো রক্ষনাবেক্ষণ। গাছকে ভালোবাসতে হবে। নিজেদের পরিবারের সদস্য ভাবতে হবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *