১৯৯৯ সাল নাগাদ স্থানীয় গ্রামবাসী এলাকাটিকে সবুজ করার উদ্যোগ নেন। একটি সংস্থার সহযোগিতায় পুরুলিয়ার মাটি এবং প্রকৃতির জন্য উপযুক্ত গাছ বসানোর কাজ শুরু হয়। সেই গাছের প্রতিপালন করতে থাকেন গ্রামবাসী। ১০ বছরে ছবিটা বদলাতে শুরু করে। শাল, মহুয়া, বট, অশ্বত্থ, অশোক, কেন্দ, পিয়াল, আম, কাঁঠাল, ডুমুর, কালমেঘ, নিম, গুলঞ্চ, অর্জুনের মতো গাছে এখন চারপাশ শুধুই সবুজ। ঠিক হয়, পরের ১০ বছরে আরও গাছ বসানো হবে। কাটা হবে না একটিও পুরোনো গাছ। জঙ্গল তৈরি হওয়ায় টিলায় আস্তানা গেড়েছে হায়না, শেয়াল, নেকড়ে, খরগোশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। তাদের বংশবিস্তারও ঘটছে। এলাকাটি পুরুলিয়ার কংসাবতী উত্তর বনাঞ্চলের অন্তর্গত। এই ডিভিশনের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট মিটিংয়ে এখানকার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়। পুরুলিয়া জেলায় বন্যপ্রাণের দিক থেকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে অঞ্চলটি। টিলা, ডুংড়িগুলোয় নেকড়ে, হায়নার প্রচুর শেল্টার তৈরি হয়েছে। বন দপ্তরের নজরদারিও রয়েছে এখানে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অতীতে জলের আকাল লেগেই থাকত গ্রামে। এখন এলাকার কুয়োগুলোয় জল থাকে। হয় পর্যাপ্ত বৃষ্টি। অরণ্যের পাঠা নেওয়া নবম শ্রেণির ছাত্র অর্পণকুমার দেশমুখ বলে, ‘একটা নেড়া পাহাড়কে যে ঘন জঙ্গলে পরিণত করা যায় তা নিজের চোখে দেখলাম। বুঝলাম, শুধু গাছ লাগালেই হবে না তার রক্ষণাবেক্ষণও সমান জরুরি। এই পাহাড়ে আবার আসব।’ স্কুলের ছাত্র উত্তম সিং, সঞ্জয় মাহাতোর কথায়, ‘প্রকৃতির শিক্ষা পাওয়া গেল মানুষের তৈরি অরণ্যতে। এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’
ঝাড়বাগদা গ্রামের বাসিন্দা সুজিত কুমার মহান্তির কথায়, ‘আমাদের তৈরি বন যেন এখন নিজেই এক শিক্ষক। যে নতুন প্রজন্মের কাছে হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিচ্ছে গাছ প্রকৃতির কাছে কতটা অপরিহার্য।’ গ্রামবাসী অর্পিতা মহান্তির কথায়, ‘গাছ লাগানো নতুন কিছু নয়। আসল ব্যাপার হলো রক্ষনাবেক্ষণ। গাছকে ভালোবাসতে হবে। নিজেদের পরিবারের সদস্য ভাবতে হবে।’