Lok Sabha Election 2024 : ফিনিশিং ল্যাপে আজ উত্তর খুঁজবে কলকাতা, চিন্তা সন্দেশখালি-ভাঙড়ে – today saturday last phase of lok sabha election 2024 voting


মণিপুস্পক সেনগুপ্ত, এই সময়: আজ, শনিবার লোকসভা নির্বাচনে শেষ দফার ভোটগ্রহণ। ষষ্ঠ দফার ভোট শেষেই এনডিএ ও ‘ইন্ডিয়া’—যুযুধান দু’পক্ষ ‘আমরাই জিতছি’ বলে বিজয়-পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। তাই বলে শেষ দফার ভোটকে হালকাভাবে নিচ্ছে না কোনও পক্ষই। শেষ দফায় দেশের যে ৯০৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উত্তরপ্রদেশের বারাণসী কেন্দ্র থেকে যিনি তৃতীয়বার প্রার্থী হয়েছেন।বাংলায় যে ন’টি কেন্দ্রে আজ ভোটগ্রহণ হবে, সেখানকার হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনা জেলার যে ন’টি কেন্দ্রে ভোট রয়েছে, তারমধ্যে অনেকগুলিই বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তবে তারমধ্যেও শাসক-বিরোধী সবার নজর থাকবে সম্ভবত উত্তর কলকাতাতেই। কারণ, ‘কাঁটে কি টক্কর’ তো সেখানেই।

অন্য কেন্দ্রগুলিতে একাধিক হাই-প্রোফাইল প্রার্থীরা লড়লেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কলকাতা উত্তর কেন্দ্রটির মতো সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর আর কোথাও হচ্ছে না। কারণ, গত কয়েক বছরের মধ্যে ওই কেন্দ্রে এই প্রথম শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে এ বার বিজেপির টিকিটে লড়ছেন উত্তর কলকাতারই প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তাপস রায়।

শেষ হাসি কে হাসবেন, সেটা বোঝা যাবে ৪ জুন। তবে আজ দু’পক্ষই যে পিচ কামড়ে লড়াই চালাবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সুদীপের সব থেকে বড় অ্যাডভান্টেজ তিনি জোড়াফুল শিবিরের প্রার্থী, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই কেন্দ্রের সব স্তরের নেতৃত্বকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাপসের ইউএসপি—তিনি আছেন কলকাতা উত্তরের ঘরে-ঘরে।

যুদ্ধের আগে তাপস মনে করছেন, এক লাখেরও বেশি মার্জিনে জিতে কলকাতার কোনও কেন্দ্রে প্রথম পদ্ম ফোটাবেন তিনি। সুদীপও গেরুয়া ব্রিগেডের স্নায়ুচাপ বাড়াতে বাতাসে ভাসিয়ে দিয়েছেন সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর সাফল্যের খতিয়ান। হাই-প্রোফাইল এই কেন্দ্রের জন্য ৬৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে আজ।

তবে সাবধানের মার নেই। দক্ষ-সংগঠক হিসেবে পরিচিত তাপস বিলক্ষণ জানেন, ভোট কীভাবে করাতে হয়। তাই শুক্রবারই তিনি বিধানসভাভিত্তিক দুষ্কৃতীদের নামের তালিকা তৈরি করে তাদের গ্রেপ্তারির দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন এবং কলকাতা পুলিশকে ইমেল পাঠিয়ে দিয়েছেন। কলকাতা উত্তরের বিজেপির প্রার্থীর এই পদক্ষেপ যে প্রশাসনকে চাপে রাখবে, সেটা নিশ্চিত। সুদীপ মুখে যা-ই বলুন, তিনিও বিলক্ষণ জানেন, লড়াইটা মোটেই সহজ নয় এ বার। শুক্রবার ভোটের আগের দিন এই কেন্দ্রের তৃণমূল শিবিরে তাই তৎপরতা ছিল তুঙ্গে।

শেষ দফার ভোটে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের আরও আটটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ৫৭টি লোকসভা আসনের ভোটগ্রহণ হবে। তার মধ্যে বাংলা ছাড়াও বিহারের ৮টি, হিমাচল প্রদেশে ৪, ঝাড়খণ্ডে ৩, ওডিশায় ৬, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে ১৩টি করে এবং চণ্ডীগড়ে ১ আসনে ভোট নেওয়া হবে। এই কেন্দ্রগুলিতে একাধিক তারকা প্রার্থীও রয়েছেন। জাতীয় স্তরে মোদী ছাড়াও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, অনুরাগ ঠাকুর, অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত এবং লালপ্রসাদ যাদবের কন্যা তথা আরজেডি প্রার্থী মিসা ভারতীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে এদিন।

বাংলায় ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে লড়ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম মুখ রেখা পাত্র। কলকাতা দক্ষিণে তৃণমূলের বর্ষীয়ান প্রার্থী মালা রায়, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, দমদমে তৃণমূলের সৌগত রায় ও সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী, যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, সিপিএমের তরুণ প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য, বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারদেরও ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজই।

এর পাশাপাশি বরাহনগর বিধানসভার উপনির্বাচনও রয়েছে আজ। নির্বাচন কমিশনের কর্তারা জানাচ্ছেন, এবারের লোকসভা ভোটে প্রথম থেকে পঞ্চম দফা পর্যন্ত বাংলায় তেমন কোনও বড় অশান্তি হয়নি। কিন্তু ষষ্ঠ দফায় তমলুক, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় হিংসার ঘটনা ঘটায় কিছুটা হলেও চাপে রয়েছে কমিশন। শেষবেলায় যাতে কমিশনের মুখে চুনকালি না লাগে, তার জন্য সচেষ্ট আধিকারিকরা। ভোট নির্বিঘ্নে করার জন্য সপ্তম দফায় প্রায় ৯৬৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে রাজ্যে।

তার সঙ্গে থাকছে ৩৩ হাজার ২৯২ জন রাজ্য পুলিশকর্মী। শুধু কলকাতা পুলিশ এলাকাতেই মোট ৯০টি কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। সপ্তম দফায় পাঁচজন পুলিশ পর্যবেক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, থাকবেন ১০ জন সাধারণ পর্যবেক্ষকও। ভোটে নজরদারির জন্য প্রতিটি বুথে থাকবে ওয়েবক্যামের সুবিধা। ভোট চলাকালীন বুথে লাগানো সিসি ক্যামেরা যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, তার জন্য সতর্ক করা হয়েছে প্রিসাইডিং অফিসারদের।

ভোট মিটলেও বঙ্গে মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী

এই দফায় যে সব আসনে ভোট রয়েছে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা রয়েছে। যেমন, ভাঙড়, সন্দেশখালি, ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার এবং কলকাতার বেশকিছু এলাকা। কমিশন বাড়তি নজর রয়েছে সন্দেশখালিতে। সেই কারণে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে মোট ১১৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে। ভোটের মুখে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভাঙড়ে আইএসএফ এবং তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। অতীতের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে ভাঙড়ে ভোটের দিন ১৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *