Film Screening,বিদেশে বাংলা সিনেমা দেখাই, সঙ্গে থাকে এগরোলও: বাসব রায় – sydneys basab roy arranged bengali cinema on australias cinema hall


বাসব রায়, সিডনি
মেজমামা নেশাটা ধরিয়েছিলেন বহু বছর আগে। সিনেমার নেশা। আজও আমি সে নেশায় বুঁদ। তাই তো অস্ট্রেলিয়ায় সিনেমা হল ভাড়া করে আমি বাংলা সিনেমা দেখিয়ে বেড়াই। প্রবাসী বলে নতুন নতুন বাংলা সিনেমা দেখব না, বাকিদের দেখাব না—তা আবার হয় নাকি!
আমার শৈশব কেটেছিল মানিকতলায়। কৈশোর, যৌবনও। উত্তর কলকাতার চেনা ছন্দে বড় হয়ে ওঠা। পরে কর্মসূত্রে বিদেশ পাড়ি। কিন্তু তার অনেক আগেই মেজোমামা আমাকে সিনেমা হলে যাওয়ার নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। সে এক অমোঘ আকর্ষণ। সেলুলয়েডের স্বপ্ন। যে স্বপ্ন আমি মনের আনন্দে ছড়িয়ে বেড়াই অস্ট্রেলিয়াতেও।আজও মনে আছে মেজোমামার সঙ্গে প্রথম দেখা সিনেমা—শাম্মি কাপুরের ‘জংলি’। সেই শুরু। হিন্দি, বাংলা যখন যে সিনেমা রিলিজ হয়েছে, গোগ্রাসে গিলেছি। কিন্তু জীবন তো আর সেলুলয়েড নয়। সিনেমা দেখার পাশাপাশি লেখাপড়াটাও সিরিয়াসলি করতে হয়েছে। গোয়েঙ্কা কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্সি পাশ করি। ১৯৮৯-তে জামশেদপুরে একটি কোম্পানিতে কর্মজীবন শুরু। সেখানে ছিলাম ১৯৯৪ পর্যন্ত।

তবে লেজার বুক, ব্যালান্স শিটের খুঁটিনাটির মধ্যেও সিনেমা দেখা, গান শোনা, নাটক দেখা — এসব কিছু হারিয়ে যেতে দিইনি। আসলে উত্তর কলকাতার একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছি। ছোট থেকেই বাড়িতে বাঙালি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল দেখে এসেছি। পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ির সঙ্গেও আমাদের পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক। এর মধ্যে রূপার সঙ্গে বিয়েটাও সেরে ফেলি। ও কলেজে আমার জুনিয়র ছিল। তখন থেকেই প্রেম। এরপর ১৯৯৬-তে রেকর্ডিং কোম্পানি এইচএমভি-তে নতুন চাকরি।

কখনও দিল্লি, কখনও মুম্বই। ভিন্‌রাজ্যে পাঁচ বছর ছিলাম। ২০০২-তে দুবাই-যাত্রা কর্মসূত্রেই। ২০০৫-এ মাইগ্রেট হয়ে পাড়ি দিই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। এখনও সেখানেই। আমাদের মেয়ে রাজশ্রী পড়াশুনো শেষ করে আপাতত সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার। এ সব তো আমার নিজের কথা। নিজের পারিবারিক আর কর্মজীবনের উপাখ্যান।

sydney in

ছবি সৌজন্যে বিসিসিএল

কিন্তু সিনেমা? সেটা কি হারিয়ে গেল এ সবের মধ্যে? একদম না। আমার সিনেমাপ্রীতির কারণে অস্ট্রেলিয়ায় আমার নতুন নাম ‘সিডনির বিগ বি’। বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকতে পারি, কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতি সঙ্গে নিয়ে চলি সিডনির রাস্তাতেও। বাংলা আমার ধমনীতে। উত্তর কলকাতার দিনগুলো ভুলি কী ভাবে? জীবন জুড়ে তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়। ২০১৭ সালে সিডনির একটি সিনে ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হই।

তখন থেকে বাংলা সিনেমা দেখানো শুরু করি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে। পরে নিজেই সিডনিতে সিনেমাওয়ালা বলে একটা গ্রুপ তৈরি করি। লক্ষ্য ছিল, দুই বাংলার প্রবাসী বাঙালিদের মাতৃভাষার সিনেমা দেখানো। তাঁদের আরও বেশি করে বাংলার সঙ্গে জড়িয়ে রাখা। নতুন কোনও বাংলা সিনেমা রিলিজ় করলেই আমি চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে সেটা দেখানোর। এই কাজে ‘প্রভাতফেরি’ আর ‘ক্রেজ়ি টিকিট’ নামে দুটি সংস্থা আমাকে খুবই সাহায্য করে।

সিনেমা দেখতে দেখতে যাতে কলকাতার ফিলিংটাও পাওয়া যায়, তার জন্য ইন্টারভ্যালে ঝালমুড়ি, এগ রোল, ভেজ চপের বন্দোবস্ত থাকে। বাঙালি সিনেমা দেখতে যাবে, অথচ মুখ চলবে না, তা আবার হয় না কি! হোক না অস্ট্রেলিয়া, সিনেমাটা তো বাংলা। এই রবিবারই যেমন সিডনিতে আবির-মিমির নতুন সিনেমা ‘আলাপ’ দেখানোর ব্যবস্থা করেছি। সঙ্গে থাকছে বাঙালি স্টাইলের এগরোল। ব্যাপারটা দারুণ না?

মাসখানেক আগে সিডনির প্রবাসী বাঙালিদের দেখিয়েছিলাম ‘এটা আমাদের গল্প’। সবাই প্রশংসা করেছিল। শুধু প্রবাসী বাঙালিরা নন, কিছু অস্ট্রেলিয়ানও দেখতে এসেছিলেন। একদম হাউসফুল। দর্শকদের অনুরোধে সেকেন্ড শো’র ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। ইন্টারভ্যালে ডিমের ডেভিলও ছিল।

শুধু সিনেমা কেন, ফি বছর সিডনিতে ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’-এর উদ্যোগে ‘একতারা’ আয়োজন করা হয়। তার সঙ্গেও আমি যুক্ত। কলকাতার কত নামী-দামী শিল্পী বাংলা গান গেয়ে গিয়েছেন আমাদের অনুষ্ঠানে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি, বাংলা গান আর বাংলা সিনেমায় বেঁচে থাকি। প্রবাসে সব বাঙালিই যেন এ ভাবেই বাংলা সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারে। আমাদের যৌবনে অনেককেই বলতে শুনতাম, তিনি গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের কর্মী। ভিনদেশে আমিও তেমন বাংলা সিনেমা আন্দোলনের এক সামান্য কর্মী। যাঁর মূলমন্ত্র, বিদেশেও বাংলা সিনেমার পাশে থাকুন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *