গত কয়েকদিন ধরে শিলিগুড়িতে জল নিয়ে মেয়র গৌতম দেবকে যে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি এখনই কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। শনিবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘আজই জল ছাড়ার কথা ছিল। রবিবার থেকে বিলি হওয়ার কথা। আমি এখনই মন্তব্য করছি না। যা বলার রবিবারই সাংবাদিক বৈঠক করে বলব।’
শিলিগুড়ির এই পানীয় জল প্রকল্পটি তৈরিই হয়েছে তিস্তা ক্যানাল এবং মহানন্দা ব্যারাজের সংযোগে। সেচ দপ্তর গজলডোবায় ক্যানালে জল পাঠানো বন্ধ রেখে বাঁধ মেরামতিতে নামায় শিলিগুড়িতে জলের সঙ্কট সৃষ্টি হয়। পুরসভার জল প্রকল্পের পুকুরে সঞ্চিত জল শেষ হয়ে গেলে পিএইচই-র পক্ষ থেকে মহানন্দা থেকে জল তোলা শুরু হয়। প্রথম দিকে জলের গুণমান ঠিক থাকলেও পরে জলের মান নেমে যায়।
পিএইচই কর্তাদের কাছ থেকে ওই রিপোর্ট পেয়েই মেয়র শহরের বাসিন্দাদের জল পান করতে নিষেধ করে দেন। মেয়রের ওই নিষেধের পরেই রাজনৈতিক দলগুলির রে-রে করে পথে নেমে পড়ে। বাসিন্দাদের বিষ জল খাওয়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। পুরসভার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। তার সঙ্গে ‘চোর’, ‘চোর’ বলে কটাক্ষ থেকে শুরু করে কিছুই কার্যত বাদ পড়েনি।
এদিনও দুপুরে বিজেপির ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় দলবল নিয়ে মাথায় হাঁড়ি চাপিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ এক বিজেপি কর্মীকে আটক করেন। কোন আধিকারিক, কী উদ্দেশ্যে মেয়রকে মহানন্দার জল সবরাহের জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন ওঠে।
ক্ষুব্ধ মেয়র বলেন, ‘কারও পরামর্শ দেওয়ার প্রশ্ন কেন উঠছে? যতদিন মহানন্দার জলের গুনমাণ ঠিক ছিল, ততদিন তো কোনও সমস্যা হয়নি। জলের রিপোর্ট খারাপ আসার পরে আমি জল খেতে নিষেধ করি। বিকল্প হিসেবে জলের পাউচ থেকে জলের ট্যাঙ্কারের ঢালাও ব্যবস্থা করা হয়। স্রেফ রাজনীতি করার জন্য এই সমস্ত আজেবাজে কথা রটানো হচ্ছে।’
মেয়রের দাবি, জল সঞ্চয়ের বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে পুরসভাকে এই সমস্যায় পড়তে হত না। বামেরা এই প্রকল্প তৈরির সময়ে সেই বিকল্প পুকুরের ব্যবস্থা করেনি। সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য পাল্টা মন্তব্য করেন, ‘সাহস থাকলে মেয়র বিতর্কে বসুন। তার পরে মানুষ ঠিক করুন, এই পরিস্থিতির জন্য কারা দায়ী।’ এরই মধ্যে এদিন শিলিগুড়িতে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘শিলিগুড়ির জলসঙ্কট নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হবে।’