ডিভোর্স পেতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যে নালিশে মামলা, জরিমানা ২০ লক্ষ – kalimpong district court fined husband 20 lakh in false complaint case against wife


আমেরিকায় প্রমোদতরীতে চাকরি স্বামীর। বছরে দু’এক বার আসেন দেশে। দুই সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী থাকেন কালিম্পংয়ে। বৃদ্ধ, অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়ির দেখভালের দায়িত্বও তাঁর। অভিযোগ, স্বামীর একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক। স্ত্রীর কাছে ধরা পড়ায় একাধিক বার ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু স্বভাব বদলায়নি। ২০২২ নাগাদ নতুন বান্ধবীকে নিয়ে আস্তানা গাড়েন শিলিগুড়িতে।স্ত্রীকে মেল করে ওই বান্ধবীকে বিয়ের কথাও জানিয়ে দেন। ডিভোর্স চান। কিন্তু স্ত্রী-র দিক থেকে ডিভোর্সে সাড়া না পেয়ে জেলা আদালতে মামলা করেন। সেখানে স্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর প্রতি নজর না দেওয়া এবং বান্ধবীর প্রতি নৃশংসতার অভিযোগ করেন। জেলা আদালত সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ও তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটে ডিভোর্সের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

মিথ্যে মামলা করে স্ত্রীকে হেনস্থা করায় মামলাকারীকে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার কালিম্পংয়ের জেলা বিচারক দুর্গা খৈতান নির্দেশ দিয়েছেন, ৬০ দিনের মধ্যে স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে ওই টাকা পাঠাতে হবে স্বামীকে। রোশন লাম্বার সঙ্গে মালিনী রাইয়ের (নাম পরিবর্তিত) বিয়ে ২০০৫-এ। তাঁদের দুই সন্তানের বয়স ৮ ও ১২ বছর। বিয়ের পর থেকে দু’জনে থাকতেন দিল্লিতে।

২০১৬-য় দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার আগে স্ত্রী ফিরে আসেন কালিম্পংয়ে। তার কিছুদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়েন রোশনের মা। তাঁর শুশ্রূষার দায়িত্ব নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে শুরু করেন মালিনী। এরই মধ্যে স্বামী নতুন সংস্থায় চাকরিতে যোগ দেন। তার বছর তিনেক পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ত্রী দেখতে পান, অন্য এক মহিলাকে নিয়ে স্বামী জর্ডনে ছুটি কাটাতে গিয়েছেন। অশান্তি শুরু হলে স্ত্রীর হাতে-পায়ে ধরে সে যাত্রায় রক্ষা পান রোশন।

দুই সন্তানকে নিয়ে কালিম্পংয়ে শ্বশুরবাড়িতে থেকে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখাশোনা করতে থাকেন মালিনী। স্বামীর সঙ্গে ক্রমেই দূরত্ব বাড়তে থাকে। মালিনী লক্ষ্য করেন, ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি থেকে রোশন আর তাঁর বাবা-মাকে দেখতেও বাড়ি আসছেন না। স্ত্রী ও সন্তানদের দায়িত্ব নেওয়া তো দূর-অস্ত্‌। সে বছর এপ্রিলে স্ত্রীর পরিচালিত কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আচমকা হাজির হয়ে ডিভোর্স চেয়ে হুঁশিয়ারি দেন রোশন। তার আগে বান্ধবীর নাম করে স্ত্রীকে মেল করে জানান, ওই মহিলাকেই তিনি বিয়ে করেছেন। মালিনীদের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চান না।

ডিভোর্সের ব্যাপারে স্ত্রী-র দিক থেকে সাড়া না পেয়ে রোশন মামলা করেন কালিম্পং জেলা আদালতে। আদালত সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ও তথ্যপ্রমাণ দেখে রায়ে জানিয়েছে, রোশন নিজেই এক মহিলাকে বিয়ের কথা জানিয়ে স্ত্রীকে মেল করেছিলেন। আবার মামলা করতে গিয়ে বলেছেন, তাঁর অন্য কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ স্ত্রীর বিরুদ্ধে বান্ধবীর প্রতি নিষ্ঠুরতার অভিযোগ তুলেছেন।

স্ত্রীকে হেনস্থা করার জন্যেই মিথ্যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে বলে মনে করেছে আদালত। তাই রোশনকে মোটা টাকা জরিমানা করেছেন জেলা জজ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণে কোনও সহায়তা করতেন না রোশন। এমনকী মেয়ের স্কুলের বেতনও যে তিনি দেননি, দিয়েছেন রোশনের বাবা–তাও সাক্ষ্যে উঠে এসেছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *