আর দশটা দিনের মতো সকাল থেকে কাগজ পড়ে টিভিতে খবর দেখে সময় কাটিয়েছেন পরিবারের কর্তা বর্ষীয়ান শিশির অধিকারী। অবশ্য সকালেই পরিবারের মেজ ছেলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতায় রওনা দিয়েছিলেন দলীয় কাজে। পরিবারের সেজ ছেলে তমলুকের বিদায়ী সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী সারাদিন বাড়িতে থাকার পর বিকেলে তমলুকে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাতে যান। আর ছোট ছেলে সৌমেন্দু বাড়িতে থাকলেও দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছেন, বাড়ির কাছের দলীয় অফিসে গিয়ে ঘরোয়া বৈঠকও করেছেন।
কয়েক দশক ধরে কাঁথির অধিকারী বাড়ি শান্তিকুঞ্জ থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে এসেছে। তৃণমূলে থাকার সময়ে পরিবারের কর্তা শিশির অধিকারীর সঙ্গে দেখা করা ও রাজনৈতিক পরামর্শের জন্যে তৃণমূল কর্মীদের ভিড় লেগে থাকতো। কিন্তু ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মেজ ছেলে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে কয়েক বছর সে ভাবে আর ভিড় দেখা যায়নি।
বর্তমানে তিন ছেলের সঙ্গে বাবা শিশির অধিকারীও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। চলতি লোকসভা নির্বাচনের সময়ে বিজেপি নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে শান্তিকুঞ্জে। পরিবারের কর্তার সঙ্গে নেতারা সৌজন্য সাক্ষাৎকার করতে এলেও পরিবারের প্রথা মেনে আতিথেয়তায় কোনও ত্রুটি রাখেননি শান্তিকুঞ্জের বাসিন্দারা। এগজ়িট পোল যা-ই বলুক না কেন, রাজনৈতিক মহলের মতে, এবারের নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের ওপরে শান্তিকুঞ্জের বাসিন্দাদের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হবে। শান্তিকুঞ্জ ফের জেলা তথা রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে কিনা, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে।
তবে জয়-পরাজয়ে কোনও গুরুত্ব দিতে রাজি নন পরিবার কর্তা শিশির অধিকারী বা অন্য সদস্যরা। পরিবারের কর্তার পরিষ্কার কথা, ‘জয়-পরাজয় নিয়ে কী এসে যায়! ৬০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। অনেক ওঠাপড়া দেখেছি। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। শুধু মাটি কামড়ে থাকতে জানতে হয়। তাই টেনশনের কী আছে?’ তিনি বলেন, ‘অন্য দিনগুলো যেমন কাটাই, তেমনই কাটিয়েছি ভোটের ফলপ্রকাশের আগের দিনটা। ছেলে জিতবে কী হারবে, তা পরীক্ষা শুরুর আগের হোম ওয়ার্কে ঠিক হয়ে গিয়েছে। শুধু শুধু টেনশন করি না।’
এক কথা সেজ ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারীর। তিনি বলেন, ‘অন্য দিনের মতো এক রুটিনে আজকের দিন কাটিয়েছি। সাংসদ অফিসে বসে মানুষের সমস্যা শুনেছি। যথাসম্ভব সমাধানের চেষ্টা করেছি। রাতে তমলুকে বিজেপির দলীয় কর্মীদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে সোজা বাড়ি।’
অন্য দিকে, শান্তিকুঞ্জের বাসিন্দাদের শান্তি যাতে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য অধিকারী বাড়ির আশপাশে কোনও জমায়েত করা যাবে না বলে সব রাজনৈতিক দলকে জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। পাশেই ভোট গণনা কেন্দ্র। সে কারণে শান্তিকুঞ্জ লাগোয়া এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি গণনা কেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড ও গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।
কাঁথি লোকসভায় বিজেপির মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে গণনা কেন্দ্রের আশপাশে কোনও জমায়েত করা হবে না।’
অন্য দিকে, তৃণমূল শিবিরের দাবি, এগজ়িট পোলকে ভুল প্রমাণিত করে মঙ্গলবার সবুজ আবির উড়বে কাঁথি-সহ সারা রাজ্যে। জয় নিয়ে আশাবাদী তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক বলেন, ‘তৃণমূল কর্মীরা কোনও অশান্তি করে না। জয়-পরাজয় নিয়ে আমরাও ভাবি না। ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তৃণমূল মানুষের পাশে আছে ও থাকবে। আমরা মানুষের সঙ্গে থাকি বলেই কেন্দ্রীয় জওয়ানদের নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় না। বাড়িও পাহারা দিতে হয় না।’