সংগঠন, চোরাস্রোত ও মমতা ফ্যাক্টর! ত্রিফলায় বিদ্ধ দিলীপ ঘোষ – bardhaman durgapur lok sabha constituency result why dilip ghosh lost


তুহিনা মণ্ডল, গোপাল সোনকার| এই সময় ডিজিটাল

নড়বড়ে সংগঠন? ঘরের লোকজনদের ‘পরের মতো’ আচরণ? নাকি …? কোন অস্ত্রে ‘বধ’ দিলীপ ঘোষ? দিলীপের হারের নেপথ্যে সবথেকে বেশি উঠে এসেছে তা হল সংগঠন। মজবুত সুতো না থাকলে সবথেকে দামি ফুল দিয়েও নাকি মালা তৈরি করা যায় না। রাজনৈতিক মহল বলছে, সংগঠনের ‘দুর্বল সুতো’-য় ফুল গুঁজে আর মালা গাঁথতে পারেননি দিলীপ।তাঁকে একেবারে অচেনা পিচে খেলাতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু, রাজনীতির ‘অচেনা ২২ গজ’-এ একেবারে কুপকাত দিলীপ ঘোষ। অন্যদিকে, জয়ের থেকে খানিক দূরে থাকা ‘কীর্তিমান’-এর মুখে মিটিমিটি হাসি। চারিদিকে উড়ছে সবুজ আবির। বিশ্বকাপ জয় করেছিলেন, এবার যে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের মানুষের মন জয় করেছেন, তার প্রমাণ মিলছে ভোট বাক্সেই।

২০১৫ সালে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। এরপর তাঁকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। একাধিকবার দিলীপ ঘোষকে শুনতে হয়েছে তাঁর ‘মুখ খারাপ’। গায়ে মাখেননি তিনি। বরং ‘প্রাতঃভ্রমণ রাজনীতি’ থেকে শুরু করে ‘বিলিতি গোরুকে আন্টি’ সম্বোধন, তিনি ‘দিলীপগিরি’ চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে নয়, এবার দিলীপ ঘোষকে বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে লড়াই করানোর সিদ্ধান্ত নেয় গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে তৃণমূল আগেই প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছিল ১৯৮৩-র বিশ্বকাপজয়ী টিমের সদস্য কীর্তি আজাদকে।

জ্ঞান সিং সোহনপালকে রাজনীতির ময়দানে ‘বধ’ করা দিলীপকে হেলায় হারালেন কীর্তি। সকালেই প্রাক্তন ক্রিকেটার হংকার দিয়েছিলেন, ‘জয় নিয়ে ভাবছি না। ব্যবধানটাই আসল।’ বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজের কথা মিলিয়ে দিয়েছেন।

বিকেল ৪টে ৩০ মিনিট নাগাদ নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য মোতাবেক বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে কীর্তি আজাদ এগিয়ে ছিলেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪৮ ভোটে। অচেনা পিচে খেলতে নামার কারণেই কি ‘পা হড়কালেন’ দিলীপ ঘোষ?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ দাগ কেটেছে। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিং অহলুওয়ালিয়া জয়ী হওয়ার পর তিনি খুব একটা নিজের সংসদীয় কেন্দ্রে পা রাখেননি। এর একটা প্রভাব এই লোকসভা নির্বাচনেও পড়েছে।’

পাশাপাশি বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে বিজেপির বড় ফ্যাক্টর ছিল বিজেপির ‘ক্যালসিয়ামহীন’ সংগঠন। বিরোধীদের দাবি ছিল এই কেন্দ্রে বিজেপির সংগঠনের ‘হাড়গোড় ভাঙতে শুরু করেছে’। স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘সাংগঠনিক দুর্বলতার খেসারত দিতে হয়েছে দিলীপ ঘোষকে। কিছুদিন আগেই তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘বিজেপির মধ্যেও এমন কিছু মানুষ আছে, যারা দলকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা তোলে’।

কীর্তির ‘দিলীপ বধ’-এর নেপথ্যে অপর গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উঠে আসছে মেদিনীপুরের ‘দামাল ছেলে’-র মুখে কটু বাক্যের ‘ফোয়ারা’। ওয়াকিবহাল মহলের কথায়, ‘দিলীপ ঘোষ কোনওদিন সুবাক্য কহেননি। কিন্তুস উলটো পালটা মন্তব্য এবার আর বরদাস্ত করেননি আম জনতা। দিলীপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটু কথা বলেছেন। তেমনই যখনই তখন কমিশনকে মেসোমশাই বলে ডেকেছেন।’ বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ, ‘রগড়ে দেওয়া উবাচ ভালোভাবে মেনে নেননি সাধারণ মানুষ।’
অন্যদিকে, কীর্তি আজাদের হয়ে প্রচার করেছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়, যা অন্যতম ফ্যাক্টর হয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।

রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই শোনা যায়, মেদিনীপুরেও নাকি ‘চাপ ছিল’ দিলীপের। আর সেই কারণেই তাঁর কেন্দ্র বদল। যদিও সেই গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছিল বিজেপি। এদিকে বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের মানুষ কি সত্যিই দিলীপকে ‘নিজের করতে’ পেরেছিলেন?

‘জয় নয়, মার্জিন নিয়ে ভাবছি’, দিলীপকে ‘ক্লিন বোল্ড’ করা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী কীর্তি

এই যেমন দিলীপবাবু বর্ধমানের মহারাজা ভেবে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বনবিহারী কাপুরের গলায় মালা দিয়ে বসেছিলেন। সঙ্গে আবার জোরে জোরে স্লোগান তুলেছিলেন, ‘মহারাজ উদয়চাঁদ অমর রহে’। চুপচাপ বিষয়গুলি নজরে রেখেছিলেন সাধারণ মানুষ। জবাব দিয়েছেন ভোটবাক্সে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *