Lok Sabha Election Result 2024 : অযোধ্যা টু সন্দেশখালি, পদ্ম ফুটল না দুই অস্ত্রেও – lok sabha election results 2024 bjp lost most important sheet ayodhya and sandeshkhali


এ যেন হৃৎপিণ্ডে সপাটে ধাক্কা! গর্ভগৃহেই ধরাশায়ী নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সবথেকে জোরালো অস্ত্র— হিন্দুত্ববাদ। অযোধ্যা (ফৈজ়াবাদ কেন্দ্র) এবং সন্দেশখালি (বসিরহাট কেন্দ্র) বিজেপিকে ফেরালো শূন্য হাতে। এবং সেই সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে গেল ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের দেওয়াল লিখন— বিজেপির আগমার্কা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি পুরোদস্তুর প্রত্যাখ্যান করেছে মানুষ।অযোধ্যায় রামমন্দিরের উত্তুঙ্গ উদ্বোধনই হোক, বা সন্দেশখালিতে হিন্দু মহিলাদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে ধুন্ধুমার ফেলে দেওয়া— ধোপে টেকেনি একটিও। অযোধ্যা আগাগোড়াই না হয় বিজেপির ন্যাশনাল ইস্যু। কিন্তু ভোটের আগে সন্দেশখালিকেও জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় নিয়ে ফেলেছিলেন মোদী-শাহরা। বাংলার যে গ্রামের মেঠো পথে তাঁরা এনআইএ-র রোবটিক বম্ব স্ক্যানিং মেশিনের চাকা গড়িয়ে দিয়েছিলেন, যে পাড়াগাঁয়ে কালো পোশাকে এনএসজি কম্যান্ডোদের স্ট্র্যাটেজিক মুভমেন্ট হয়েছিল, মঙ্গলবার দিনান্তে ভোটগণনার ফল বলছে, সেই সন্দেশখালির সবক’টি বুথে হেরেছে বিজেপি।

এমনকী পদ্মের প্রার্থী রেখা পাত্র তাঁর নিজের বুথে হেরে বসে আছেন। অথচ এই রেখাকেই সামনে রেখে ভোট-অঙ্কের যাবতীয় রেখচিত্র সাজিয়েছিল বিজেপি। নির্যাতিত, প্রতিবাদী মুখ হিসেবে রাতারাতি আলোচনার সামনের সারিতে উঠে আসেন রেখা। আর তাঁকে বসিরহাটে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কে? স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী!

এই বাছাই খানিকটা চমকই ছিল রাজনৈতিক মহলের কাছে। বাংলায় প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে রীতিমতো হিসেব কষে এগিয়েছিলেন নয়াদিল্লির ৬এ পণ্ডিত দিনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিগ বস-রা। ধাপে ধাপে ঘোষণা করা হয় প্রার্থীদের নাম। কতটা হিসেব কষে প্রার্থী বাছাই হয়েছিল, এই ধীরে চলো প্রক্রিয়া থেকেই তা পরিষ্কার। এহেন পরিস্থিতিতে একেবারে আনকোরা রেখাকে নিজে হাতে তুলে এনেছিলেন মোদী।

শুধু তা-ই নয়, প্রচার শুরুর আগে বাংলার দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে কৃষ্ণনগরের অমৃতা রায় ছাড়া একমাত্র রেখাকেই ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করেছিলেন মোদী। বসিরহাটে রেখার সমর্থনে প্রচারেও আসেন। এরপর যতবার প্রচারে মোদী বাংলায় এসেছেন, ততবারই ঘুরে-ফিরে সন্দেশখালির কথা তিনি তুলেছেন। অমিত শাহও এই প্রসঙ্গ তুলে বাংলার সরকারকে বিঁধেছেন চাঁচাছোলা ভাষায়। তার মধ্যেই ইডি-র অভিযান, অশান্তি, শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তারি, এনএসজি-র অভিযান, জাতীয় মহিলা কমিশনের ভিজ়িট— একে একে নানা পর্ব ঘটে গিয়েছে সন্দেশখালির বুকে।

সন্দেশখালির পুরো পাটিগণিত বদলে যায় সন্দেশখালি ২ ব্লকের বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় (যার সত্যতা ‘এই সময়’ যাচাই করেনি)। অতঃপর প্রকাশ্যে আসতে থাকে আরও নানা ভিডিয়ো (যার কোনওটিরই সত্যতা ‘এই সময়’ যাচাই করেনি)। পরপর ভাইরাল সেই সব ভিডিয়ো হাতিয়ার করে পাল্টা প্রচারে নামে তৃণমূল কংগ্রেস। সন্দেশখালির তোলা নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা— এই ন্যারেটিভের পালে জোরালো হাওয়া লাগতে শুরু করে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সন্দেশখালি-আক্রমণ চালিয়ে গেলেও এই সব ভিডিয়ো নিয়ে খুব একটা মুখ খুলতে শোনা যায়নি মোদী বা শাহকে। এবং মঙ্গলবার পরিষ্কার হয়ে যায়, হিন্দু নারীদের উপরে অত্যাচারের তত্ত্বে বিন্দুমাত্র সিলমোহর দেননি সন্দেশখালির ভোটাররা। এ দিন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কুৎসা করা হয়েছিল সন্দেশখালি নিয়ে। তা সত্ত্বেও আমরা জিতেছি।’

জবাব দিল সন্দেশখালি, জবাব বসিরহাটের! বাজিমাত হাজি নুরুলের

তবে গেরুয়া-রাজনীতি সম্ভবত সবথেকে বড় ধাক্কাটি খেয়েছে অযোধ্যায়। রামমন্দির হলো সেই ইস্যু যার সলতে বিজেপি তার জন্মলগ্ন থেকে সযত্নে জ্বালিয়ে রেখেছিল এবং গত ২২ জানুয়ারি তার বৃত্ত পূর্ণ করেন নরেন্দ্র মোদী। বেনজির জাঁকজমকে তাঁর হাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় রামলালার। রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়ে ওঠে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের সম্ভবত সবথেকে বড় ইস্যু। এমনকী ইস্তেহারেও ফলাও করে তার উল্লেখ করা হয়। রামমন্দির নিয়ে কতটা আগ্রাসী ছিলেন মোদী? মধ্য প্রদেশে প্রচারে বলেন, ‘আমি চারশো সিটে জয় চাই যাতে কংগ্রেস রামমন্দিরে বাবরি তালা লাগাতে না পারে।’

৪০০ তো হয়ইনি। উল্টে ফৈজ়াবাদে সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদের কাছে পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভোটে হেরে গিয়েছেন বিজেপির লাল্লু সিং। রামমন্দির গড়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেও হিন্দুত্ববাদের আঁতুড়ঘর রক্ষা করতে পারল না বিজেপি। হেরে গিয়ে লাল্লু বলেন, ‘আমি অযোধ্যার মর্যাদা রক্ষা করতে পারলাম না। আমারই কিছু খামতি ছিল নিশ্চয়ই।’ আর মমতার খোঁচা— ‘যে অযোধ্যা নিয়ে এত কিছু করেছে, সেখানেই তো হেরেছে। আর রামমন্দির নিয়ে শঙ্করাচার্যরা তো যা বলার বলেইছেন। আমি আর নতুন করে কী বলব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *