যেমন বসিরহাটের বিজেপি-প্রার্থী রেখা পাত্র, কৃষ্ণনগরের বিজেপি-প্রার্থী অমৃতা রায়, বিষ্ণুপুরের তৃণমূল-প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল, মালদা উত্তরের তৃণমূল-প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, মালদা দক্ষিণের তৃণমূল-প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হান। বামেদের নতুন মুখ শ্রীরামপুরের দীপ্সিতা ধর, ডায়মন্ড হারবারের প্রতীক-উর রহমান, জলপাইগুড়ির দেবরাজ বর্মন, যাদবপুরের সৃজন ভট্টাচার্যও ভোটে হেরেছেন।
অন্য দিকে, তৃণমূলের ওল্ড গার্ড সৌগত রায় দমদমে, মালা রায় কলকাতা দক্ষিণে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীরামপুরে, অরূপ চক্রবর্তী বাঁকুড়ায়, হাজি নুরুল বসিরহাটে, পার্থ ভৌমিক ব্যারাকপুরে জিতেছেন। বিষ্ণুপুরে সৌমিত্র খাঁ, বালুরঘাটে সুকান্ত মজুমদার, পুরুলিয়ায় জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর মতো বিজেপির ‘সিজনড পলিটিশিয়ান’রাও জিতেছেন।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, নিউ ফেসের নিরিখে তৃণমূল-প্রার্থীদের সাফল্য তুলনায় বেশি। যাদবপুরে সায়নী ঘোষ, বর্ধমান পূর্বে শর্মিলা সরকার, হুগলিতে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বার লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়েই সংসদে যাচ্ছেন। শর্মিলার বক্তব্য, ‘দলের গ্রহণযোগ্যতার পাশাপাশি আমার ক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি কাজে এসেছে। বহু মানুষ নতুন মুখ হিসেবে আমার উপর ভরসা রেখেছেন। দল সব কিছুর উপরে হলেও, মানুষ হয়তো ভেবেছেন, আমি নতুন বলে কাজের দিক থেকেও এগিয়ে থাকব।’
কিন্তু সেই ফ্যাক্টর কেন কাজ করল না সায়ন, সৃজন, দীপ্সিতাদের ক্ষেত্রে? প্রচারে মানুষের ভালো সাড়া পেয়েও তাঁরা সকলেই কেন নিজেদের কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে চলে গেলেন? দীপ্সিতার বক্তব্য, ‘তৃণমূল-বিজেপির চরম মেরুকরণের মধ্যে প্রচারে ভালো সাড়া পেলেও আমরা ইভিএমে কাঙ্ক্ষিত সমর্থন আদায় করতে পারিনি। তবে ফলপ্রকাশের পর বহু মানুষ, এমনকী তৃণমূলেরও অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বলেছেন, ভোটে হারা-জেতা থাকেই। আমি যেন রাজনীতি থেকে সরে না যাই।’
সায়নের ছোট্ট বক্তব্য, ‘মানুষ প্রচারে দারুণ সাড়া দিলেও ভোট দেওয়ার সময় ভেবেছেন, কার জেতার সম্ভাবনা বেশি, সেটা দেখেই ভোট দিয়েছেন। আমরা জিততে পারি, এই ধারনাটা তৈরি করতে পারিনি।’
কী বলছেন ওল্ড গার্ডরা?
কলকাতা দক্ষিণের দু’বারের সাংসদ ও তিন দশকের রাজনীতিক মালা রায়ের বক্তব্য, ‘লোকসভায় আসলে দল দেখেই ভোট হয়। এখানেও তাই হয়েছে। তার উপরে মানুষ আমাকে চেনেন। তাঁদের সুখেদুঃখে আমাকে পাশে পান। সে কারণেই দল আর আমার প্রতি মানুষ ভরসা করেছেন।’
বিষ্ণুপুরের তিন বারের সাংসদ বিজেপির সৌমিত্র খাঁ-র সংযোজন, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রভাব, নারী-পুরুষের ভাগাভাগি আমার কেন্দ্রেও প্রবল ছিল। তার পরেও মানুষ আমাকে জিতিয়েছেন আমি সাংসদ হিসেবে কতটা কাজ করেছি, আমার রিপোর্ট কার্ড কী–সেটা দেখেই। ভোটাররা মনে করেছেন আমি গ্রহণযোগ্য। সেটা এতদিন ধরে রাজনীতি করারই ফল।’