জামাইষষ্ঠীর বাজারে শেষে কিনা ভিলেন হয়ে দাঁড়াল তাপপ্রবাহ! জামাইয়ের পাতে শাশুড়ি মিষ্টি তুলে দেবেন কী, এই গরমে মিষ্টি টাটকা রাখতেই তো হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।বর্ধমানের মিষ্টি বলতেই সবার প্রথমে চলে আসে সীতাভোগ-মিহিদানার নাম। দুই মিষ্টিই পেয়েছে জিআইয়ের তকমা। তার সঙ্গে জামাইষষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে তৈরি হচ্ছে হরেকরকমের বাহারি মিষ্টি। কিন্তু, মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই গরমে শো-কেসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাজিয়ে রাখা মিষ্টি। অনেকে কিনে নিয়ে গিয়ে ফেরতও দিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায় ক্ষতির সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে দোকানের সুনামও।
আলমগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত মিষ্টির দোকানের ব্যবসায়ী অমিত দত্ত বলেন, ‘সোমবার সকালে আমরা মালাইশাঁস তৈরি করেছিলাম। দুধ, খোয়াক্ষীর, চানা, কাজু, পেস্তা দিয়ে তৈরি। পিস প্রতি দাম ৩৫ টাকা। ১০০টা করেছিলাম। রাত ৯টায় একজন ১৪টা মালাইশাঁস নিয়ে গিয়েছিলেন। সব নষ্ট বলে মঙ্গলবার সকালে ফেরত দিয়ে গেলেন। দোকানে তখনও ২৯টি পিস পড়েছিল। আমরাও খেয়ে দেখলাম, নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুরো ক্ষতি। গরম সর্বনাশ করে দিচ্ছে।’
গরমে বিপন্ন সীতাভোগ-মিহিদানাও। শহরের নামী দোকানগুলোয় প্রতিদিন তৈরি হয় ১০ থেকে ১৫ কেজি সীতাভোগ মিহিদানা। এই গরমে সেই পরিমাণ কমে গিয়েছে অর্ধেকেরও বেশি। সাধারণত এই মিষ্টি তৈরির পরে দেড় থেকে দু’দিন ধরে বিক্রি করতেন ব্যবসায়ীরা। এখন আর সেটা হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী দেবাদিত্য চক্রবর্তী।
বলেন, ‘কম পরিমাণে সীতাভোগ-মিহিদানা তৈরি করায় ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু গুণগত মান বজায় রাখার জন্য বেশি মিষ্টি তৈরি করতে পারছি না। জামাইষষ্ঠী জেনেও করার সাহস করিনি। গুডউইল ধরে রাখতে কোনও আপস করছি না আমরা।’ তিনি জানাচ্ছেন, মিষ্টি তৈরির উপকরণও সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।
বলেন, ‘গরমে আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হয়েছে মিষ্টি তৈরির ছানা, খোয়াক্ষীর, দুধ আমরা ঠিকমতো প্রিজার্ভ করে রাখতে পারছি না। এই তাপমাত্রায় ফ্রিজ়েও সেই ঠান্ডা থাকছে না। ফলে ওগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ শহরে মিষ্টির দোকানগুলোর ২৫ শতাংশ শো-কেস বাতানুকূল। এই দোকানগুলো তবু মিষ্টি বাঁচিয়ে রাখতে পারছে কিন্তু সাধারণ শো-কেসে রাখা মিষ্টি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি।
তেঁতুলতলা বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী সুব্রত দত্ত বলেন, ‘আমাদের ছোট দোকান। এসি শো-কেস নয়। ফলে একদিনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শনিবার আমার প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন দিনে একাধিকবার মিষ্টি তৈরি করতে হচ্ছে। এতে খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে।’ ব্যবসায়ীদের কথায়, লাভের গুড় খেয়ে নিচ্ছে গরমই।