Abhishek Banerjee : ‘স্বল্প বিরতি’তে অভিষেক, পোস্টে জল্পনা জোড়াফুলে – abhishek banerjee taking short rest after fighting lok sabha election several months


এই সময়: বেশ কয়েক মাস ধরে একটানা লড়াইয়ের পরে অল্পদিনের বিশ্রামে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচি থেকে শুরু করে এ বছর লোকসভা ভোটের দীর্ঘ প্রচারপর্বে জেলায় জেলায় ছুটে বেড়িয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বস্তুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিকে সামনে রেখে এবং তার উল্টোদিকে একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো একাধিক প্রকল্পে কেন্দ্রের বঞ্চনার পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্র সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরেই এবারের লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির জয়রথ রুখতে নেমেছিল তৃণমূল।‘বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’-এর ডাকে যে ব্যাপক ভাবে সাড়া দিয়েছে বাংলার মানুষ, সেটা লোকসভা ভোটের রেজ়াল্টেই পরিষ্কার বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বুধবার অভিষেক গত বছর খানেকের এই লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তুলে ধরে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রামে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। দীর্ঘ পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘কিছু জরুরি মেডিক্যাল কারণে আমি সংগঠন থেকে সাময়িক বিরতি নিচ্ছি।’

তাঁর সংযোজন, ‘আমাদের রাজ্যের মানুষ ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের চাহিদাগুলি বোঝার জন্য একটা সুযোগ পাব এই বিরতি পর্বে।’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি এও বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, মানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে সব দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্রুত পদক্ষেপ করবে।’ জেলায় জেলায় ঘুরে এই দলীয় কর্মসূচি থেকে তিনি কী বুঝেছেন, সেটাও অভিষেক উল্লেখ করেছেন এই পোস্টে। তাঁর বক্তব্যের নির্যাস, নবজোয়ার যাত্রা থেকে শুরু করে তিনি গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছেন।

সেখানে মূল্যবৃদ্ধি থেকে একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দেওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে রাজ্যের মানুষ কীভাবে ভুগছেন, সেটা তিনি সামনে থেকে দেখেছেন। এর বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলের তরফে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালানো হয়েছে, প্রতিবাদ হয়েছে দিল্লিতেও। রাজ্যের মানুষের সমস্যার কথা মাথায় রেখে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে অনুদানের মাত্রা বাড়িয়েছে।

অভিষেকের পর্যবেক্ষণ, বাংলার মানুষের আস্থা ও ভরসা যে তাঁদের উপর আছে, সেটা এবারের লোকসভা নির্বাচনেও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এরজন্য তিনি জনতার কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জেরে যেভাবে আবাস যোজনার টাকাও আটকে দেওয়া হয়েছে, তাতে বাংলার মানুষ ক্ষুব্ধ। অভিষেক বলেছেন, ‘আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই সমস্যা মেটাতে আমরা সংকল্পবদ্ধ এবং আমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগকে এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।’

অভিষেক কতদিনের জন্য এই বিরতিতে যাচ্ছেন, তার স্পষ্ট উল্লেখ এই পোস্টে করেননি। তবে এই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেখানে নতুন সাংসদদের শপথগ্রহণ ও স্পিকার নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগেই তিনি ফের দলের কাজে ফিরবেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তবে এভাবে দলীয় কর্মসূচি থেকে বিরতি নেওয়ার এরকম ঘোষণায় দলের একাংশ কিঞ্চিৎ বিস্মিতও।

লোকসভা ভোট ঘোষণার আগে তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ বিতর্কে জোড়াফুলের সর্বোচ্চ স্তরের সঙ্গে অভিষেকের কোনও দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না, তা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করছিলেন। যদিও তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক দু’জনেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দলের মধ্যে কোনও দূরত্ব নেই। এদিন অভিষেকের এক্স পোস্টের মধ্যেও রাজনৈতিক মহলের একাংশ সেই ‘দূরত্ব’-এর ইঙ্গিত খুঁজছেন। তাঁদের যুক্তি, ২০২১-এর বিধানসভা, ২০২৩-এর পঞ্চায়েত এবং এ বছরের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল সাফল্যের পিছনে মমতার নেতৃত্ব, তাঁর সরকারের বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচির পাশাপাশি অভিষেকের রণকৌশলও নিশ্চিতভাবে একটা বড় কারণ।

তৃণমূলের ইতিহাসে লোকসভা ভোটের নিরিখে এবারেই সেকেন্ড বেস্ট রেজ়াল্ট হয়েছে। তারমধ্যে নবীন প্রজন্মের বেশ কয়েকজন প্রার্থীও বড় জয় পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে লোকসভার ভিতরে জোড়াফুলের নেতৃত্বে নবীন-প্রবীণের ভারসাম্য রক্ষা করে এগোলে ভালো হতো এবং আগামী প্রজন্মকে সংসদীয় রাজনীতিতে আরও অভিজ্ঞ করে তোলা যেত বলে তৃণমূলের একাংশের অভিমত। কিন্তু আগের মতো এবারও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লোকসভার দলনেতা ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের মুখ্যসচেতক রাখা হয়েছে।

অভিষেকের সাময়িক বিরতিতে যাওয়ার পিছনে তৃণমূল নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তও কোনওভাবে কাজ করেছে কি না, সেটাও বোঝার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। এই ব্যাপারে জোড়াফুল নেতৃত্বের কেউ প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে দলের এক সিনিয়র নেতার বক্তব্য, ‘এরমধ্যে কারও সঙ্গে কারও দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে দেখার কোনও কারণ নেই। চিকিৎসার জন্য এর আগেও অভিষেক বাইরে গিয়েছেন। আর মমতা ও অভিষেক দু’জনেই বারবার বলেছেন, দল এক আছে, এক হয়েই লড়াই করবে। ফলে বিরোধীদের উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’

আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে বিশেষ বার্তা অভিষেকের

ঘটনা হলো, শুধু রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে দৌড়ে বেড়ানো নয়, ভোটের ফল প্রকাশের পরেও দিল্লিতে তৃণমূলের তরফে ‘ইন্ডিয়া’র মিটিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অভিষেকই। মমতা নিজেই জানিয়েছিলেন, অভিষেকই ওই বৈঠকে যাবেন। তারপরে অখিলেশ যাদব, রাঘব চাড্ডা, উদ্ধব ঠাকরেদের সঙ্গেও আলাদা করে বৈঠক করে অভিষেক জানিয়ে দেন, ‘ইন্ডিয়া’য় কোনও একটি নির্দিষ্ট দলের ‘দাদাগিরি’ তৃণমূল মানবে না। জোড়াফুলের নবীন প্রজন্মের এক নেতার বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়ার মিটিংয়েও দলের এই স্ট্যান্ড পরিষ্কার বুঝিয়েছেন অভিষেক। নিশ্চিতভাবে তাঁর রাজনৈতিক কুশলতা দলনেত্রীও জানেন। ফলে কারও সঙ্গে কারও দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে প্রচারের কোনও অর্থই নেই।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *