জনমানসে উদ্বেগের তীব্রতা মালদায় কিছুটা বেশি। মাংস-ডিম বিক্রিতে তেমন প্রভাব না-পড়লেও অনেকের মধ্যেই এই নিয়ে ‘কিন্তু কিন্তু’ রয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর স্পষ্ট জানিয়েছে, জেলায় বার্ড ফ্লু-র হদিশ নেই কোনও পোলট্রিতে। মালদার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ী বলছেন, ‘একেবারেই উদ্বেগের কিছু নেই।’
এ দিন বিকেলে স্বাস্থ্য ভবনে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব বিবেক কুমারকে নিয়ে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। সেখানেই তাঁরা জানিয়ে দেন, হাঁস-মুরগি বা তাদের ডিম নিয়ে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন নেই।
সরকারি বার্তায় স্পষ্ট— বার্ড ফ্লু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। কারণ, দুই শিশুর শরীরে বার্ড ফ্লুয়ের যে স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে, তা H9N2 প্রজাতির— দুর্বল প্রকৃতির। পোলট্রি উজাড় করে দেয় H5N1 প্রজাতির স্ট্রেন। এবং তার অস্তিত্ব বঙ্গে মেলেনি। এ দিন স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষজ্ঞ দল মালদা পৌঁছয়।
আজ, শুক্রবার তাঁরা সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কালিয়াচকে যাবেন। আগেই সেখানকার বার্ড ফ্লু আক্রান্ত শিশুর বাড়ি লাগোয়া পোলট্রির মুরগির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছিল। কোনও নমুনায় ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি। আবার মালদা ও কলকাতায়, ওই দুই শিশুর সংস্পর্শে আসা কারও শরীরেও বার্ড ফ্লু-র ভাইরাসের হদিশ পাওয়া যায়নি।
এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে দুই দপ্তরের সচিব জানান, রাজ্যের বিভিন্ন পোলট্রি থেকে বছরে প্রায় ৩০ হাজার ৮০০ নমুনা (শুধু এপ্রিল-মে মাসেই ১৭২৮টি) পরীক্ষা করে সরকার নিশ্চিত হয়েছে, রাজ্যের কোনও পোলট্রিতে বার্ড ফ্লু হানা দেয়নি।
এর মধ্যে ৭০ শতাংশ নমুনা পরীক্ষা করে বেলগাছিয়ার রাজ্য প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাকি ৩০ শতাংশ নমুনা পাঠানো হয় ভোপালের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাই সিকিউরিটি অ্যানিম্যাল ডিজ়িজ়েসের ল্যাবে। নমুনাগুলির মধ্যে ছিল মালদারও ৩৯০টি নমুনা। কিন্তু কোথাও আপত্তিকর কিছু পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, H9N2 স্ট্রেনের মতো বিরল প্রজাতির বার্ড ফ্লু ভাইরাস সম্ভবত এ রাজ্যে এসে পৌঁছেছে পরিযায়ী পাখিদের মাধ্যমে। দুই সচিবও এ দিন জানান, সম্ভবত সাইবেরিয়া থেকে এসেছে এই স্ট্রেন, তবে তা এখনও কোনও পোলট্রিতে হামলা চালায়নি। তার পরেও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধির স্বার্থেই চিকিৎসকরা অবশ্য মাংস ও ডিম ভালো করে ধুয়ে চড়া আঁচে রান্না করার পরামর্শ দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে ভাইরাস আর বেঁচে থাকে না।