Kopai River: খোঁজ দিল ‘বেনো কাঠ’, কোপাই পারে ১০ হাজার বছর আগে ছিল ঘন জঙ্গল – bolpur kopai river becomes terrifying during the monsoon


হেমাভ সেনগুপ্ত, বোলপুর
একসময়ের স্রোতস্বিনী কোপাই আজকের মজা নদী। কিন্তু সেই মজা নদীতে পাওয়া ‘বেনো কাঠ’ (বানের জলে পাওয়া কাঠ) সন্ধান দিল, সংলগ্ন অঞ্চলে ১০ হাজার বছর আগে ছিল গভীর অরণ্য।মজে যাওয়া এই কোপাই বর্ষার সময় হয়ে ওঠে ভয়ঙ্করী। প্লাবিত করে আশেপাশের গ্রাম। বছর কয়েক আগে বর্ষার জল নামতে পাড়ুই এলাকার সেহেলাই গ্রামের মানুষের নজরে এসেছিল নদীর বালিতে কালো কাঠের মতো কিছু পড়ে। গ্রামের লোকজন কোদাল, কাটারি নিয়ে বালি থেকে কাঠ তুলতে নেমে পড়েন। কারও কারও সন্দেহ হয়, এগুলি সাধারণ কাঠ নয়।

তাই শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন ঊর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায়কে খবর দেওয়া হয়। তিনি কিছু লোকজন নিয়ে এলাকায় যান। কাঠ দেখে চমকে যান ঊর্মিলা। তাঁর কথায়, ‘কাঠের সামান্য অংশ দেখেই সন্দেহ হয়েছিল। কারণ কাঠের রংটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। তাই এই কাঠ তোলার জন্য উদ্যোগ শুরু হয়।’ কিন্ত বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়।

‘বেনো কাঠ’ বলে গ্রামের লোক নদী থেকে তুলে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তাঁদের বোঝাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় ঊর্মিলাকে। শেষমেষ বহু কষ্টে তাঁদের রাজি করান তিনি। বন দপ্তরের সাহায্য চাওয়া হয়। নদী থেকে ওই কাঠ তুলতে গিয়ে দেখা যায়, তা লম্বায় ৩০ ফুট। এই কাঠ ঠিক কত পুরোনো, তার হদিশ পেতে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সাহায্য নেওয়া হয়।

কার্বন ডেটিং করে তারা জানায়, ১০ হাজার ৪০০ বছরের পুরোনো এই কাঠ। চমকে ওঠেন সকলে। এবার খোঁজ শুরু হয়, এটা কী কাঠ? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের কাছে ওই কাঠের নমুনা পাঠানো হয়। জানা যায়, এটি তেঁতুল জাতীয় গাছের কাঠ। একই ভাবে কোপাই নদীর তীরের আদিত্যপুর গ্রামের কাছে একটি কাণ্ড উদ্ধার হয়। কার্বন ডেটিং করে জানা যায়, ৯৪০০ বছরের পুরোনো কুলজাতীয় গাছের কাঠ এটি।

উদ্ধার হয় ১০ হাজার বছরের পুরোনো কুসুম জাতীয় গাছের কাঠও। ওই কাঠ তুলে এনে শান্তিনিকেতনের বনদপ্তরের প্রকৃতি ভবনে আনা হয়। সেখানেই সংরক্ষিত হচ্ছে কাঠগুলি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কাঠগুলি প্রমাণ করে যে, কোপাই নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ১০ হাজার বছর আগে বিশাল জঙ্গল ছিল। কালের নিয়মে সে সবই অবশ্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সঞ্চিতা গোস্বামী বলেন, ‘কার্বন ডেটিং করে কোপাই নদী থেকে উদ্ধার হওয়া এই সব কাঠের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। সংরক্ষিত এই প্রাচীন কাঠ, ভূতত্ত্ববিদদের গবেষণার বিষয়। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও অবশ্য দ্রষ্টব্য। কোপাই নদীর যে অঞ্চল থেকে এই সব প্রাচীন কাঠ উদ্ধার হয়েছে, সেই অঞ্চলে যে বহু বছর আগে বিস্তীর্ণ বনরাজি ছিল তা অনুমান করা যায়।’

কোপাইয়ের গর্ভে কত যে প্রাচীন রহস্য লুকিয়ে রেখেছে প্রকৃতি, অবহেলায় পড়ে থাকা কালো ‘বেনো কাঠ’-ই তার প্রমাণ!





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *