ভোটে জেতার সাধ তাঁর পূরণ হয়েছে। সে যতই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হোক না-কেন! এ বার তিনি অন্যকে ভোটে জেতাতে চান। কোনও রাজনৈতিক দলের বড় নেতা হিসেবে নয়, ভোটকুশলী হিসেবে!বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ নিজেই একটি ভোটকুশলী সংস্থা খোলার তোড়জোড় শুরু করেছেন। যে সংস্থার মাথায় বসে তিনি আগামিদিনে ভোট-প্রার্থীদের রণকৌশল ঠিক করে দেবেন। তাঁদের বাতলে দেবেন নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার গোপন স্ট্র্যাটেজি।
তবে ভোটকুশলী হতে চাওয়ার আগে সৌমিত্র চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে। এ বারের লোকসভা ভোটে প্রতিকূল হাওয়াতেও নিজের দুর্গ অটুট রেখেছেন তিনি। তাঁর আশপাশের সব কেন্দ্রে বিজেপি হারলেও বিষ্ণুপুর আসনটি সৌমিত্রর সৌজন্যে গেরুয়া ব্রিগেডের দখলেই থেকে গিয়েছে। এরপরই তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সৌমিত্রর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনার কথা।
সৌমিত্র নিজেও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন যে, তাঁরও মন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে যথেষ্ট রয়েছে। প্রকাশ্যেই সৌমিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলা থেকে যে ক’জন এ বারের লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে জিতেছেন, তাঁদের মধ্যে আমিই সিনিয়র মোস্ট। আমি তিনবারের সাংসদ। তার আগে বিধায়কও ছিলাম। সংসদীয় রাজনীতিতে এত বছরের অভিজ্ঞতা বাংলার বাকি বিজেপি সাংসদদের নেই।’
তবুও নরেন্দ্র মোদী ৩.০ মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি সৌমিত্রর। বিজেপির অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে না পেরে তোপ দাগবেন তিনি। হয়তো কাঠগড়ায় তুলবেন বিজেপি নেতৃত্বকে। এমনকী, সৌমিত্রর দলবদলের সম্ভাবনা নিয়েও চর্চা ছিল পদ্মে। যদিও নতুন মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত হওয়ার পর বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ নিজের দলের কারও বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করেননি, কাউকে কটাক্ষ করেননি, দলবদলের সম্ভাবনাতেও জল ঢেলে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি যা করতে চলেছেন, তা শুনে চোখ কপালে উঠেছে পদ্ম-শিবিরের অনেকেরই।
শেষে কি না, রাজনীতির বাজারে সৌমিত্রর নবজন্ম হবে ভোটকুশলী হিসেবে! এক বিজেপি নেতার টিপ্পনি, ‘জানি না, সৌমিত্রর বাতলে দেওয়া স্ট্র্যাটেজি ভবিষ্যতে কোনও ভোট-প্রার্থীর কাজে আসবে কি না! কিন্তু ওঁর মন্ত্রী হতে চাওয়ার স্ট্র্যাটেজিটা ডাহা ফেল মেরেছে। আর সৌমিত্রর ভোট-স্ট্র্যাটেজিস্ট হতে চাওয়ার মধ্যেও মন্ত্রী হওয়ার কোনও স্ট্র্যাটেজি লুকিয়ে থাকলে অবশ্য অন্য কথা।’
সৌমিত্র নিজে অবশ্য বলছেন, ‘দলকে আমি জানিয়েছি, দু’বছর নিজের কিছু কাজে ব্যস্ত থাকব। ভোটকুশলী হিসেবে কাজ শুরু করার ভাবনাচিন্তা আছে। আজ পর্যন্ত আমার কোনও রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী ভুল হয়নি। নিজেও বহুবার ভোটে জিতেছি। জানি, কীভাবে নির্বাচনে জিততে হয়। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু শুরু করতে পারলে মন্দ কী!’
তবে বিজেপি সাংসদ হিসেবে বিষ্ণুপুরের জন্য যা করার, তিনি করে যাবেন বলেই সৌমিত্রর দাবি। তাঁর সম্ভাব্য নতুন ‘ভেঞ্চার’কে খোঁচা দিয়ে এক তৃণমূল নেতার সরস মন্তব্য, ‘বিজেপিতে প্রাক্তন সাংসদের সংখ্যা এখন অনেক। তাঁরা সবাই সৌমিত্রর ক্লায়েন্ট হলে ব্যবসা তো ফুলে-ফেঁপে উঠবে।’ সবশেষে প্রশ্নটা অবশ্য রয়েই যাচ্ছে—সৌমিত্র কি তাহলে প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) নেক্সট জেনারেশন?