গত ৪ জুন লোকসভা ভোটের রেজ়াল্টের পাশাপাশি নিট-এরও ফল বেরোয়। তারপরই একের পর এক কারচুপির অভিযোগ। কেন্দ্রই সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে যে ১,৫৬৩ জনকে গ্রেস মার্কস দেওয়া হয়েছিল। কেন তা দেওয়া হলো, সে ব্যাপারে অবশ্য স্পষ্ট কারণ উল্লেখ করতে পারেনি কেন্দ্র। এই প্রেক্ষিতে দুর্নীতির অভিযোগে দেশ জুড়ে সরব বিরোধীরা। ছাত্রছাত্রীদের হয়রানির বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদও হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার ব্রাত্যর বক্তব্য, ‘আমাদের রাজ্যের শিক্ষক (নিয়োগ) দুর্নীতি নিয়ে অনেক আলোচনা হলো। অনেক টক-শো, তদন্ত হলো। গ্রেপ্তারও করা হলো। কিন্তু কেন্দ্রের নিট, যা সারা ভারতের ক্ষেত্রে খুব সম্মানের পরীক্ষা, সেটার ক্ষেত্রে যা হলো, গোটা দেশ দেখছে। তার জন্য কোনও তদন্ত হবে না? সিবিআই-ইডি মাঠে নামবে না?’
কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার পরে পাল্টা বলেন, ‘ব্রাত্যবাবুর কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন চালুনি সুঁচকে বলে, তোর পিছনে ফুটো। মাধ্যমিকের প্রশ্ন এতবার ফাঁস হয়েছে যে লোকে এখন মাধ্য-লিক বলে। তাঁদের জমানায় কী হয়েছে, সে তো দেখাই যাচ্ছে।’
ডাক্তারির প্রবেশিকা কেন্দ্রীয় ভাবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ইউপিএ-টু আমলে। ২০১৩ সালে প্রথম সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্য এতে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়। তার জেরে ২০১৩-র পর দু’বছর সর্বভারতীয় পরীক্ষা হয়নি। আগে যেমন রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডগুলি নিজেদের মতো পরীক্ষা নিত, সে ভাবেই মেডিক্যালে ভর্তি হয়।
কিন্তু মামলার নিষ্পত্তির পর ২০১৬ সাল থেকে লাগাতার কেন্দ্রীয় ভাবেই নিট হচ্ছে। ব্রাত্য এ দিন বলেন, ‘শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত। রাজ্যই তো আগে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ডাক্তারির ভর্তি-পরীক্ষা নিত। কিন্তু বিজেপি সে সব না মেনে জোর করে রাজ্যের হাত থেকে মেডিক্যালের প্রবেশিকা কেড়ে নিয়েছে।’ এই সূত্রেই রাজ্যের হাতে পরীক্ষা ফেরানোর কথা বলেন ব্রাত্য।
এমিনতেই বিহার, গুজরাট থেকে পেপার লিকের অভিযোগ উঠছে। অনৈতিক ভাবে পরীক্ষার্থীদের সাহায্যের অভিযোগে গুজরাট পুলিশ সম্প্রতি গোধরা থেকে একটি স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল ও শিক্ষক-সহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিছু বাছাই করা পরীক্ষার্থীকে তাঁরা ব্ল্যাঙ্ক উত্তরপত্র জমা দিতে বলেন বলে অভিযোগ। যাতে পরে তা ভর্তি করে দেওয়া যায়। শনিবারও বিহারের পাটনায় ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকরা রাস্তায় নেমে নিট বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান।
কলকাতায় মৌলালি যুব কেন্দ্র থেকে কলেজ স্কোয়্যার পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র সংগঠন এসএফআই। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন — ‘বিজেপি শপথ নেওয়ার সঙ্গেই আরও একবার দেশের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থীর কান্না শুনতে পাচ্ছেন না, কারচুপি দেখতে পাচ্ছেন না। অথচ সর্বসমক্ষে সব কিছুই আছে।’