বিহারের জেলে বন্দি কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিং, নাকি টিটাগড়ের শাহজাদা? বেলঘরিয়া গুলি কাণ্ডের নেপথ্যে কে তা নিয়ে ধন্দ কাটছে না পুলিশের। নাকি সুবোধের নির্দেশেই শাহজাদা রুট প্ল্যান বানিয়ে গোটা পরিকল্পনার ছক কষেছিল সেটিও পুলিশ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। তবে যেহেতু গুলি চলার পর ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের কাছে সুবোধের নামেই হুমকি ফোন এসেছিল, তাই ঘটনায় তার জড়িত থাকার সম্ভাবনাই জোরালো হচ্ছে পুলিশের কাছে।এক্ষেত্রে আসল অপরাধী কে তা শনাক্ত করতে পুলিশের অন্যতম অস্ত্র ফোনের ভয়েস টেস্ট৷ সুবোধের গলার সঙ্গে সেটি মেলাতে বিহারের বেউর জেলে গিয়ে তাকে জেরা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে পুলিশ। শাহজাদার সম্পর্কেও পুলিশ খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। ঘটনার তদন্তের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখতে সোমবার বেলঘরিয়া থানায় হাজির হন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) অনুপম সিং, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (বেলঘরিয়া) শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ পদস্থ পুলিশ কর্তারা।
প্রায় তিন ঘণ্টার উপরে বৈঠক হয় থানাতেই। পরে অবশ্য সিপি জানিয়ে দেন, ঘটনায় কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে খোঁজ চলছে অপরাধীদের। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘কিছু ক্লু পাওয়া গিয়েছে। তারই সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ পুলিশ সূত্রে খবর, যে দুই দুষ্কৃতী গুলি চালিয়েছিল তারা বেলঘরিয়া স্টেশনে বাইক রেখে ট্রেনে চেপেই বিহারে পালিয়েছে। তাদের সন্ধানে পুলিশের একটি বিশেষ টিম বিহারে রওনা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের পুলিশ শনাক্তও করতে পেরেছে বলে খবর।
আক্রান্ত ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলকে রবিবার রাতেই দেওয়া হয়েছে পুলিশি নিরাপত্তা৷ ব্যারাকপুরের আরও এক ব্যবসায়ী তাপস ভগৎকেও পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরে বেলঘরিয়া রথতলা মোড়ের কাছে বিটি রোডের উপর ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের গাড়ি লক্ষ করে আট রাউন্ড গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ব্যবসায়ীকে৷ ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পুলিশের সামনে হুমকি ফোন এবং পরদিন রবিবার ফের হুমকি ফোনে বিচলিত হয়ে পড়েন অজয়।
ব্যারাকপুরের আর এক ব্যবসায়ী তাপস ভগতের কাছে পরপর দু’দিন হুমকি ফোন আসায় তিনিও আতঙ্কিত। তাপস তৃণমূলের ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার হিন্দি প্রকোষ্ঠের সহ সভাপতি। অজয় মণ্ডলের মতো তিনিও পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। দু’জনকেই ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পক্ষ থেকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। দু’জনের বাড়িতেই রবিবার রাতে দু’জন করে পুলিশ পৌঁছে যায়।
অজয় বলেন, ‘ঘোরটা এখনও রয়ে গেছে। দু’জন নিরাপত্তারক্ষী এসেছেন। এ বার যদি মারে ওদের সামনেই মারবে।’ তাপসের কথায়, ‘যতক্ষণ না অপরাধীরা ধরা পড়ছে ততক্ষণ টেনশন থেকেই যাচ্ছে। দু’দিন ভয়ে বেরোইনি। রবিবার রাতে নিরাপত্তারক্ষী পাওয়ার পর সোমবার বেরিয়েছি৷’
বছর খানেক আগে টিটাগড়ে বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনে সুবোধের নাম উঠে আসে। তবে কি মণীশ খুনের পর এলাকার রাশ ধরতে সুবোধ ছেলে পাঠিয়ে গুলি চালানোর ছক কষেছে ব্যবসায়ীর উপর? সে সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। অজয়ের দাবি, এর আগে প্রায় কুড়ি বার সুবোধ তাঁকে ফোন করেছে। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। গোটা ঘটনায় রাজনৈতিক কোনও প্রভাবশালীর পরোক্ষ মদত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্থানীয়রা।