সময়ের পিছনে ছুটতে গিয়েই কি দুর্ঘটনা? স্পিডোমিটার চেক করলেই জানা যাবে কারণ – kanchanjunga express accident cause will be known after checking speedometer


সময়ে খাবার পৌঁছনোর জন্য প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ডেলিভারি বয়দের শহরের রাস্তায় ছুটে বেড়াতে দেখা যায়। বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে গিয়ে তাঁরা অনেক সময়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। জলপাইগুড়ির ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পিছনেও সেই তত্ত্ব সামনে আসছে।রেলকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভারতীয় রেল সারা বছরে যা রোজগার করে, তার সিংহভাগই আসে পণ্য-পরিবহণ থেকে। রেলের পণ্য পরিবহণ ব্যবসায় বেড়েছে বেসরকারি অংশগ্রহণ। সড়কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কত কম সময়ে রেলে পণ্য পাঠানো যায়, তার প্রতিযোগিতা চলছে। অভিযোগ, সেই চাপে অনেক ক্ষেত্রে মালগাড়ির গতি বাড়াতে একরকম বাধ্য হচ্ছেন মালগাড়ির ড্রাইভাররা। কশান অর্ডার অমান্য করতেও তাঁরা পিছপা হচ্ছেন না।

মঙ্গলবার থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার তদন্তে নেমেছে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি। তার আগেই অবশ্য রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, মালগাড়ির চালকের ভুলেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে রেলকর্তারা বলছেন, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে আগে থেকেই অটো সিগন্যাল বিকল ছিল। তাই মালগাড়ির চালককে টিএ-৯১২ ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে দিনের বেলায় মালগাড়িরটির গতিবেগ থাকার কথা ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার, আর রাতে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার।

কিন্তু বাস্তবে গতিবেগ তার থেকে অনেক বেশি ছিল। সে জন্যই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মালগাড়িটি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মেরেছে। রেলের এই দাবির সত্যতা অবশ্য মালগাড়ির ইঞ্জিন রুম থেকে উদ্ধার হওয়া স্পিডোমিটার পরীক্ষা করলেই জানা যাবে। তার মধ্যে ভরা থাকে চিপ। তা দিয়ে ট্রেনের প্রতি মুহূর্তের গতিবিধি জানা যায়। বিমানের ব্ল্যাক বক্সের মতো স্পিডোমিটারটি একটি বাক্সের মধ্যে রাখা থাকে। দুর্ঘটনায় কখনও নষ্ট হয় না।

রেলের নিয়ম অনুযায়ী, মালগাড়ির চালকের সঙ্গে একজন সহকারী চালক থাকা বাধ্যতামূলক। চালক সিগন্যাল দেখতে ভুল করলেও সহকারী চালক তাঁকে সতর্ক করে দেবেন। শুধু তা-ই নয়, সিগন্যাল কী অবস্থায় রয়েছে, সেটা তাঁকে মুখে বার বার বলে যেতে হয়। সেই কথোপকোথন রেকর্ড করা হয়। তাই শুধুমাত্র মালগাড়ির চালকের ভুলের জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, এমনটা মানতে নারাজ চালকদের একাংশ।

‘এই সময়’-এর অন্তর্তদন্তে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনা ঘটার আগে মালগাড়ির চালক অনিল কুমার টানা তিন দিন নাইট ডিউটি করছিলেন। যদিও দু’দিনের বেশি মালগাড়ির চালককে ডিউটি দেওয়া যায় না। দুর্ঘটনার আগের রাতে তাঁকে ফোন করে ডেকে আনা হয়। চালকের সংখ্যা কম থাকায় বহু ক্ষেত্রে এ ভাবে ট্রেনের ড্রাইভারদের একটানা নাইট ডিউটি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। তার জন্য চালকদের উপর বাড়তি স্ট্রেস তৈরি হচ্ছে। ডিউটির সময়ে ঘুমে তাঁদের চোখ জড়িয়ে আসছে।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা ২৭ মিনিটে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রাঙাপানি স্টেশন ছাড়ার পরে ৮টা ৪২ মিনিটে মালগাড়িটি রাঙাপানি স্টেশন ছাড়ে। অর্থাৎ দু’টি ট্রেনের মধ্যে প্রায় পনেরো মিনিটের গ্যাপ ছিল। তা সত্ত্বেও কী ভাবে মালগাড়িটি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মারল, তার কোনও সঠিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না রেলকর্তারাও।

প্রশ্ন উঠছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখেও মালগাড়ির চালক কেন ইমার্জেন্সি ব্রেক ব্যবহার করলেন না? পূর্ব রেলের এক সেকশন কন্ট্রোলারের ব্যাখ্যা, ‘মালগাড়ির গতিবেগ ১০-১৫ কিলোমিটারের মধ্যে থাকলে অন্তত ১৮০ মিটার আগে থেকে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষতে হয়। তার বেশি গতিবেগ হলে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষলে মালগাড়ির বগিগুলো পাল্টি খেয়ে যেতে পারে। তাতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। সে জন্যই হয়তো মালগাড়ির চালক ইমার্জেন্সি ব্রেক কষার ঝুঁকি নেননি। ডুবন্ত টাইটানিক জাহাজের ক্যাপ্টেনের মতো শেষ পর্যন্ত নিজের কেবিনেই বসেছিলেন। দুর্ঘটনার পর সেখান থেকেই তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *