মাছে ভাতে বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ। ইলিশের গন্ধ ও স্বাদের ভোজন রসিক বাঙালির দুর্বলতা নতুন করে বলার নয়। তবে এতদিন পর্যন্ত ইলিশ মাছের জন্য সমুদ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হত। এবার সেই দিন শেষ। এবার ইলিশের উৎপাদন হবে আবদ্ধ পুকুরে। কোলাঘাট ব্লকের জামিট্যা এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ইলিশ মাছ চাষ শুরু করে সিফরি। আর তাতেই মিলেছে অভাবনীয় সাফল্য। পুকুর ইলিশ মাছের খাদ্য হিসাবে জু-প্ল্যাঙ্কটন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে প্রিয় মাছ ইলিশের জন্য ভোজন রসিক বাঙালিদের আর বর্ষাকালের অপেক্ষা করতে হবে না, যে কোনও ঋতুতে পুকুর থেকেই পাওয়া যাবে ইলিশ মাছ।
পুকুরের আবদ্ধ জলে ইলিশ চাষ নিয়ে আইসিএআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিসারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ডক্টর বসন্ত কুমার দাস বলেন, ‘পুকুরের জলে ইলিশ মাছ নিয়ে আমাদের গবেষণামূলক প্রকল্প চলছে। আর সেই প্রকল্প অনেকটাই সফলতা লাভ করেছে। মাত্র ৩৬ মাসে একটি ইলিশের ওজন হয়েছে প্রায় ৭০০ গ্রাম। নদী থেকে ইলিশের বাচ্চা নিয়ে এসে পুকুরে প্রতিপালন করা হয়েছে। শুধু ইলিশ প্রতিপালন নয়। ইলিশের প্রজনন ঘটিয়ে ইলিশ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা সংস্থার দাবি, পুকুরের জলের ইলিশ মাছ চাষ ও মাছের প্রজনন ঘটানো অনেকটাই সফল। ইলিশ মাছ অত্যন্ত ধীরে ধীরে বড় হয়। ফলে সময় লাগে। সেই জায়গায় পুকুরের ইলিশ প্রায় তিন বছরের মধ্যেই ভালো বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়কালে সমুদ্র এবং নদীতেও একটি ইলিশের ওজন এত গ্রাম হয় না। তাই ইলিশ নিয়ে গবেষণামূলক এই সফলতা একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। দিন দিন নদী ও সমুদ্রে ইলিশের পরিমাণ কমছে। পুকুরের জলে ইলিশের চাষ ও প্রজননের মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আইসিএআর-এনএএসএফ প্রকল্পে সিফরি কর্তৃপক্ষ রাজ্যের তিন জায়গায় পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু করেছে। আগামী দিনে বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশের জন্য বর্ষাকালের অপেক্ষা করতে হবে না।
রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরীর বলেন, ‘বকখালিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প হিসাবে পুকুরে চাষ হয়েছিল। তাতে ভালো ফল হয়নি। আমরা কোলাঘাটে নতুন করে চাষ শুরু করেছি। বিঞ্জানীদের নিয়ম মেনেই চাষ হচ্ছে তবে খুব একটা বাড়ছে না। একটু সময় সাপেক্ষ। যাতে সারা বছর ইলিশ বাজারে পাওয়া যায় তার চেষ্টা করছি। আমাদের বেশ কিছু মৎস্যচাষি তা পুকুরে চাষ করে চলেছে। কয়েক মাসের মধ্যে বাজারে রপ্তানি করা হবে।’