নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না কেউই। যে সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখনও— ৯টা সিগন্যাল পোস্ট পার করে যাওয়ার পরে হঠাৎ কেন দাঁড়িয়ে পড়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস? টি-৯১২ ফর্ম, অর্থাৎ লাল সিগন্যাল সীমিত গতিতে পার করার অনুমতি পাওয়ার পরেও কেন বেশি ছিল মালগাড়ির গতি? কেনই বা মালগাড়ির চালককে জানিয়ে দেওয়া হয়নি, সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘা দাঁড়িয়ে?
নজরদারির জন্য প্রতিটা মালগাড়িতেই ‘ভিজিল্যান্স কন্ট্রোল ডিভাইস’ নামের একটি যন্ত্র থাকে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়িতেও সেই যন্ত্র থাকার কথা। কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে সিগন্যাল-ব্যবস্থা বিকল হলেও মালগাড়ির ডিভাইসে তো তেমন হওয়ার কথা নয়। তা হলে কী হয়েছিল?
এমন বহু প্রশ্নের উত্তরই এখনও অধরা। আদৌ কি এ সব প্রশ্নের উত্তর কখনও সামনে আসবে? আপাতত তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন রেলকর্মীদেরই একাংশ। রেলের সর্বভারতীয় কর্মী সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া রেলওয়েমেন্স ফেডারেশন’-এর (এআইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক শিবগোপাল মিশ্র বলছেন, ‘সিআরএস-এর তদন্ত রিপোর্ট আসার আগেই দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে পূর্ব রেল সংবাদমাধ্যমকে তথ্য দিচ্ছে। অবাক করার মতোই ঘটনা! যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই জায়গা কলকাতা থেকে অনেক দূরে এবং সেটা উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আওতায় পড়ে। তা হলে পূর্ব রেল কেন? কিছু বলার থাকলে তো উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল বলবে!’
অন্য দিকে ভারতীয় রেলের কর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, একদিকে নেপাল এবং অন্যদিকে বাংলাদেশ। মাঝে ভারতের যে একচিলতে জায়গা রয়েছে, সেটা ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত। জায়গাটি আক্ষরিক অর্থেই মুরগির গলার মতো সংবেদনশীল। দেশের নিরাপত্তার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই একফালি জায়গা দিয়েই উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে ট্রেন ও সড়কপথের যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। এর পরেও ওই জায়গার রেলপথ এত উপেক্ষিত কেন?
রেল কর্মীদের প্রশ্ন, কেন ওই জায়গায় রেলপথ সুরক্ষিত রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? অতীতের গাইসাল বা কয়েক বছর আগের ময়নাগুড়ি এবং এখনকার রাঙাপানি— নির্দিষ্ট একটা এলাকার মধ্যেই বারবার দুর্ঘটনা। তার পরেও কেন চোখ খোলে না কর্তাদের? এ প্রশ্ন রেলকর্মীদেরই।