Kanchanjunga Express Hit Freight Train Co Pilot Regained Consciousness At Hospital


সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি
‘স্যারজি ক্যায়সা হ্যায়?’ জবাব আসে, ‘উনি ঠিক আছেন। আপনি শান্ত হোন।’ ভিড়ে ভিড়াক্কার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সি। একের পর এক জখমকে আনা হচ্ছে স্ট্রেচারে চাপিয়ে। জখম যাত্রীদের ওই ভিড়ের মধ্যে একজনকে এনে শোয়ানো হলো বেডে। শরীরে স্যালাইনের সুচ গোজার সময়ে যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠলেন তিনি।আর ওই যন্ত্রণার জন্যই হয়তো সামান্য সময়ের জন্য ফিরল চেতনাও। চোখ খুলতেই প্রশ্নটা যিনি করলেন, মনু কুমার তিনিই। দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়ির কো-পাইলট। উত্তরদাতা, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের একজন চিকিৎসক। মনুর ‘স্যারজি’ মানে, ওই মালগাড়ির পাইলট অনিল কুমার। নির্মলজোতে ট্রেন দুর্ঘটনায় অনিলের মৃত্যু হলেও গুরুতর জখম হয়েছেন কো পাইলট মনু।

বর্তমানে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে কড়া পাহারায় চিকিৎসাধীন তিনি। এটা প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল যে, কোনও ট্রেনে ডিউটি থাকলে একই কেবিনের দুটো আলাদা টেবিলে তাঁরা বসতেন। বসতেন বলতে হচ্ছে, কেননা, কোনও দিন অনিল কুমারের সামনে মনু কুমারের আর বসা হবে না।

রেল কর্মীরা জানাচ্ছেন, অনিল আর মনু ছিলেন প্রকৃত অর্থেই গুরু-শিষ্য। অনিল যে ট্রেন চালাতেন, তিনি চাইতেন কো পাইলট হিসেবে যেন সঙ্গে মনু থাকেন। আবার মনুও চাইতেন ঠিক তেমনটাই। গুরুর কাছে শিষ্য শিখতেন, কী ভাবে ট্রেনের গতি ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়। প্রয়োজন পড়লে কী ভাবে কমাতে হয়। ইঞ্জিনের হাজারো যন্ত্রপাতির মধ্যে কোনটির ঠিক কী কাজ, সেটাও স্যারজির কাছ থেকে বুঝে নিতেন মনু।

ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁদের মধ্যে ছিল সখ্য। দু’জনেই থাকতেন পাশাপাশি রেল কোয়াটার্রে। ডিউটিতে যেতেন একসঙ্গে। সোমবারও রোজকার মতোই কাজে গিয়েছিলেন ওরা। মালগাড়ি নিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে রাঙাপানি পর্যন্ত ঠিকমতো পৌঁছেও যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রেলের অপটিক্যাল কেবলে ফল্ট হয়েছে।

অগত্যা, ম্যানুয়াল সিস্টেম বা ‘টিকিট’ সিস্টেমে মালগাড়ি নিয়ে যেতে হবে। ফলে, কাঞ্চনজঙ্ঘা রাঙাপানি স্টেশন পার হওয়ার পরে গুরু-শিষ্য ম্যানুয়াল মেমো নিয়ে রওনা হয়েছিলেন নিয়ম মাফিক। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উঠে এসেছে, দুর্ঘটনার সময়ে মালগাড়ির ইঞ্জিন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে তীব্র গতিতে ধাক্কা মারলে সেই অভিঘাতে ডাউন লাইনের দুটি কামরা ছিটকে যায়।

এরপর মালগাড়ির মুখ সোজা ঢুকে পড়ে পার্সেল ভ্যানের নীচে। দুর্ঘটনার পরে কেবিনের জানলা দিয়ে অনিলের শরীরের অর্ধেকটা বেরিয়ে এসেছিল। গ্রামের লোকেরা চাপা পড়া দেহ টেনে বের করেন। আর মনু কুমার তখন নিজের কেবিনেই অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছেন। দুর্ঘটনার জেরে ইঞ্জিনের সামনের কেবিন দুমড়ে মুচড়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত রেল কর্মী এবং স্থানীয়দের সহায়তায় কো পাইলটকে উদ্ধার করে সোজা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই একটু হুঁশ ফিরলে স্যারের কথা জানতে চান তিনি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, চিকিৎসকের দেওয়া উত্তরটা বুঝতে অসুবিধে হয়নি কো পাইলটের। একরাশ হতাশা নিয়ে ফের জ্ঞান হারান মনু।

Kanchanjungha Express Accident : দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ধাক্কা মালগাড়ির, কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা? মুখ খুলল রেল

ইতিমধ্যেই রেল দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে রেলওয়ে সেফটি কমিশনার নিউ জলপাইগুড়িতে ঘাঁটি গেড়েছেন। রাঙাপানি স্টেশনের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপেক্ষা করা হচ্ছে, কবে মনু কুমার একটু সুস্থ হবেন সেজন্য। কারণ, তিনিই একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি অন্তত এটুকু জানাতে পারবেন, সেদিন অত দ্রুত মালগাড়ি নিয়ে যাওয়ার কেন হুড়োহুড়ি ছিল, আর তাতে স্যারের কোনও ভুল ছিল কি না।

কাটিহারের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার বলেন, ‘এই দুর্ঘটনার তদন্তে কো-পাইলটের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তিনিই বলতে পারবেন, কেন মালগাড়ি জোরে ছুটছিল। যে দুরন্ত গতির বলি হতে হয়েছে তাঁর স্যারজিকেও।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *