কলকাতার উপর পিটি নায়ার লিখেছেন ৫০টিরও বেশি বই। তাঁর ‘আ হিস্ট্রি অফ ক্যালকাটাজ় স্ট্রিট্স’ বইয়ে কলকাতাকে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদদের কেউ কেউ। শেষ দিকে তাঁর বইগুলোর একটি ছিল কলকাতায় গান্ধীজিকে নিয়ে। রুটি-রুজির সন্ধানে কলকাতায় এসে পড়ে এই শহরকে নায়ার গভীর ভাবে ভালোবেসে ফেলেছিলেন।
কলকাতার দক্ষিণে পুরোনো দিনের কলকাতা কথা বলে যেখানে, ভবানীপুরের সেই কাঁসারিপাড়া রোডে লাল মেঝের, দু’কামরার পুঁচকে ফ্ল্যাটে সস্ত্রীক তিনি বরাবর থেকেছেন। বাসা বদল করেননি। কারণ? ওই জায়গা থেকে হেঁটে ১০ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায় ন্যাশনাল লাইব্রেরি। যা ছিল নায়ারের রোজগারের গন্তব্য— এক রকম উপাসনাগৃহ।
অথচ গোঁড়াপন্থীরা পিটি নায়ারকে ইতিহাসবিদের স্বীকৃতি দিতে চান না, তাঁদের কাছে নায়ার নিছকই তথ্য সংগ্রাহক বা আর্কাইভিস্ট। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি লিট পাওয়া, এশিয়াটিক সোসাইটির সিনিয়র রিসার্চ প্রফেসর নায়ার অবশ্য এ সব নিয়ে চিরকালই উদাসীন থেকেছেন। হাফশার্ট ও লুঙ্গি পরে, ফ্ল্যাটের একটা ঘরে বইয়ের পাহাড়ের মধ্যে বসে পড়াশোনা করার মতো।
ঘটনা যে, ইতিহাসের পেশাদার বলতে যা বোঝায়, পিটি নায়ারের তা ছিলেন না, এই ব্যাপারে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও ছিল না। এই শহরে প্রথমে তিনি টাইপিস্টের চাকরি করেছেন, চাকরির ফাঁকেই স্নাতক হয়েছেন।
তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক কিংশুক চট্টোপাধ্যায়ের সাফ কথা, ‘অতীতের নিজস্বতা ও তথ্যনিষ্ঠতা বজায় রেখে তাকে বর্তমানের কাছে বোধগম্য করে তুলতে পারার মুন্সিয়ানা যাঁর আছে, তিনিই ইতিহাসবিদ। পিটি নায়ার যে ইতিহাসবিদ, সেই ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। ২০০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নামে কোনও ডিসিপ্লিন ছিল না। তার মানে কি তখন ইতিহাস লেখা হয়নি?’
