লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হওয়ায় আরএসএস নেতৃত্ব উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে বিজেপির অন্দরে হস্তক্ষেপ বাড়াতে শুরু করেছে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে বঙ্গ-বিজেপির নয়া সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সঙ্ঘের অভিমত নির্ণায়ক হতে পারে বলে পদ্ম-শিবিরের পর্যবেক্ষণ।
তার আগে শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ সমেত বঙ্গ-বিজেপির প্রথম সারির কোনও নেতা যে মানুষের কাছে মমতার বিকল্প মুখ হয়ে উঠতে পারেননি, স্পষ্ট সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে সঙ্ঘ মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’র এই নিবন্ধে। রাজ্যে নির্বাচনী বিপর্যয় নিয়ে সেখানে লেখা হয়েছে, ‘এখনও মমতার কোনও যথার্থ বদলি মুখ বিজেপিতে নেই। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এই খামতি কেন বাঁচিয়ে রাখছেন? বারবার ফায়দা তুলছেন মমতা!’
সঙ্ঘের এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মুখ হাজার চেষ্টা করলেও কোনও দিন বিজেপি তৈরি করতে পারবে না। মানুষের নাড়ির স্পন্দন বুঝতে পারেন শুধুমাত্র মমতাই। কারও পক্ষে এটা সম্ভব নয়।’
এই লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে প্রচার করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলায় বিজেপির প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু শুভেন্দুও মমতার বিপরীতে সমান গ্রহণযোগ্য মুখ হতে পারেননি বলেই সঙ্ঘের নিবন্ধে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন মমতা। এখন বিজেপির প্রধান মুখ শুভেন্দু তখন ছিলেন মমতার সেনানী। ২০২১ সালের ভোটে শুভেন্দুর সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত হন মমতা। সেই শ্লাঘাই শুভেন্দুকে আগামী দিনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কিন্তু এই পরাজয়ের নেপথ্যে নিজেদের দোষ দেখাই বোধহয় বিজেপি নেতাদের ভবিষ্যতের পক্ষে মঙ্গল।’
সঙ্ঘ মুখপত্রের এই চাঁচাছোলা নিবন্ধ নিয়ে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘স্বস্তিকা পত্রিকার নিবন্ধ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। এই বিতর্কে ঢুকতেও চাই না। তবে ব্যক্তির থেকে দল বড়, দলের থেকে দেশ বড়—এটাই আমাদের শিক্ষা।’ শমীক এই যুক্তি দিলেও বঙ্গ-বিজেপির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ী বার্তা দেওয়া হয়েছে নিবন্ধে।
বিজেপির নেতৃত্বের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘অজানা-অচেনা চমক দেওয়া প্রার্থী চয়নের খেসারত বিজেপিকে দিতে হয়েছে। ২০২৬ সালের ভোট এই রাজ্যে বিজেপির শেষ অগ্নিপরীক্ষা।’ এই সতর্কবার্তা নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ির ব্যাখ্যা, ‘সারা দেশের সঙ্গে বাংলাতেও যে বিজেপির শেষের শুরু হয়েছে, তা সঙ্ঘও বুঝে গিয়েছে। কোনও মুখ জোগাড় করে এই পতন ঠেকানো যাবে না।’