Park Street,খালি পায়ে ৪০ বছর, আজও মানুষের জীবন সুবাসে ভরাচ্ছেন শৈলেন রায় – sailen roy sales incense sticks at kolkata park street area and he is barefoot form last 40 years


সুকৃতি ভট্টাচার্য | এই সময় ডিজিটাল
শহর কলকাতার অন্যতম জমজমাট এলাকা পার্কস্ট্রিট। সারাবছরই মানুষের ভিড়ে একেবারে সরগরম থাকে কলকাতার এই এলাকা। তবে সেই আলোর মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে এক অন্য কাহিনি। বছরের পর বছর ধরে সেই কাহিনি একাই পথ চলছে, তাও আবার ‘খালি পায়ে’।বেহালার শখের বাজারের বাসিন্দা শৈলেন রায়। বয়স ৫৫ বছর। পার্কস্ট্রিট চত্বরে বেশ পরিচিত মুখ। আসলে পথচলতি প্রায় সকলেরই কখনও না কখনও দেখা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। রোদ ঝড় বৃষ্টিতে হাতে ধুপকাঠি নিয়ে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। আসতে তিনি ধুপকাঠি বিক্রেতা। গত ৩-৪ বছর ধরে এভাবেই বেহালা থেকে এসে পার্কস্ট্রিট চত্বরে ধুপকাঠি বিক্রি করছেন শৈলেন রায়।

বাবা-মা প্রয়াত। দাদাও আলাদা থাকেন। খোঁজখবর নেওয়ার মধ্যে শুধু ভাইজি। তিনিই যতটা সম্ভব দেখাশোনা করেন কাকার। ধুপকাঠি বিক্রি করে কোনও দিন ৫০০, কোনও দিন ৬০০, কখনও আবার ৩০০ টাকা রোজগার হয়। আর তা দিয়েই চালিয়ে নেন একার সংসার। জুঁই, চন্দন, গোলাপ, কস্তুরি, শিউলি, বেল, ধুনো সহ বিভিন্ন সুবাসের ধুপকাঠি পাওয়া যায় তাঁর কাছে। আর এই সমস্ত ধুপকাঠিই আসে বেঙ্গালুরু থেকে। মহাজনের কাছ থেকে সেই ধুপকাঠি সংগ্রহ করে পার্কস্ট্রিট চত্বরে এসে বিক্রি, কার্যত এটাই শৈলেন রায়ের রোজনামচা।

এবার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, খালি পায়ে কেন? এই প্রসঙ্গে শৈলেন রাজ জানান, আজ থেকে নয়, সেই ১৯৮৪ সাল থেকেই খালি পায়ে পথ চলা শুরু তাঁর। সেই সময় তিনি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। একদিন হঠাৎ তাঁর মনে হয়েছিল যে আর জুতো পরবেন না। যেমন ভাবা তেমন কাজ। জুতো ছাড়লেন শৈলেন। তারপর থেকে দেখতে দেখতে ৪০ বছর হয়ে গেল। পা আর জুতোর মধ্যে গলাননি। এভাবেই ঘুরে বেরিয়েছেন রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন জায়গায়। দার্জিলিং হোক বা মুম্বই, চেন্নাই হোক বা কাশ্মীর, শৈলেন পৌঁছে গিয়েছেন খালি পায়েই। এমনকী কাশ্মীরের গুলমার্গের পাহাড়েও তিনি গিয়েছেন এভাবেই। জুতো ছাড়া চলার কারণে অনেক সময়ই পায়ে বিঁধেছে কাঁটা, এমনকী কাচের টুকরোও। কিন্তু তারপরেও জুতো পরার কোনও ইচ্ছা আর মনে জাগেনি।

শুধু ধুপকাঠি বিক্রিই নয়, একটা সময় দরাজ কণ্ঠে আবৃত্তিও করেছেন শৈলেন। এমনকী বিভিন্ন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছেন। তবে এখন অবশ্য নিয়মিতভাবে আর তা অভ্যাস করা হয় না। আসলে খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। আর সেই পেটের দায়েই শহরের বুকে খালি পায়ে পথ হেঁটে চলেছেন তিনি, সঙ্গে সুগন্ধ ভরে দিচ্ছেন মানুষের জীবনে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *