এতদিন এখানে থাকলেন, আগামী দিনে শহরটাকে মিস করবেন? যদি করেন, তাহলে কলকাতার কোন কোন বিষয়গুলো ইউএসএ-তে না পাওয়ার জন্য মনখারাপ হবে? এক মুহূর্তও না-ভেবে বিদায়ী ইউএস কনসাল জেনারেলের জবাব, ‘সবচেয়ে বেশি মিস করব শহরটাকেই। কলকাতার মধ্যে অদ্ভুত একটা আকর্ষণী ক্ষমতা আছে। যাঁরা এখানে থেকেছেন, তাঁদের কেউই কলকাতাকে কখনও ভুলতে পারবেন বলে মনে হয় না।’
মেলিন্ডা বলেন, ‘আমি খেতে ভালোবাসি। আর যাঁরা আমার মতো, তাঁদের কাছে কলকাতা লা-জবাব। ফুচকা হোক বা কাটি রোল, চিকেন মালাই হোক বা চিংড়ির মালাইকারি — কোনও পদই আপনাকে হতাশ করবে না। আমাকেও করেনি।’ তবে শুধুই শহরের স্ট্রিটফুড বা রেস্তোরাঁর খাবার নয়, কলকাতায় থাকার সময়ে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন পরিচিতদের বাড়ি নিমন্ত্রণ রক্ষায় যেতে হয়েছিল তাঁকে। সেই সময়ে ‘মায়ের হাতের রান্না’ খাওয়ার সুযোগও হয়েছে মেলিন্ডার।
সেই রান্নাও তাঁর মন ভরিয়েছে। কলকাতায় এতদিন থাকলেন আর বিরিয়ানির জাদুতে মজবেন না — এমনটা কি হতে পারে! মেলিন্ডার পছন্দ বর্ষার দিনে চাদরমুড়ি দিয়ে বসে বড় এক বাটি বিরিয়ানি তারিয়ে তারিয়ে খাওয়া। এখানকার রসগোল্লা, মিষ্টি দই, সন্দেশ এবং অন্য মিষ্টিও তিনি ওয়াশিংটনে বসে মিস করবেন বলেই জানিয়েছেন। আর মনে পড়বে টাটকা ইলিশের স্বাদ। যদিও মিনেসোটায় বড় হওয়ার ফলে সেখানকার লেকের প্রচুর মাছ খাওয়ার সুযোগ তাঁর হয়েছে। তবুও ইলিশের কাঁটা সামলানোর মতো অভিজ্ঞতা হয়নি সেখানে।
মেলিন্ডার মতো অবসর সময়ে বই পড়াটা যাঁদের নেশা, তাঁদের কলকাতা কখনও হতাশ করে না। মেলিন্ডাকেও করেনি। তিনি বলছেন, ‘পার্ক স্ট্রিটের একটি বইয়ের দোকান আমার অত্যন্ত প্রিয়। সেখানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি বই পড়েছি।’
তবে কি কলকাতার সবটাই ভালো আর সুন্দর? এমন কিছু কি নেই যেটা অস্বস্তিতে ফেলেছে ওঁকে? বিদায়ী কূটনীতিক বলছেন, ‘কলকাতার গরম খুবই অস্বস্তিকর। তবে এখানকার ঘামের দৌলতে যে আমার চামড়ার গ্ল্যামার বেড়ে গিয়েছে — এতে সন্দেহ নেই।’ তিনি বলেন, ‘শহরের সব রাস্তাঘাট যদি একই রকম পরিষ্কার থাকত, তাহলে আরও ভালো হতো।’
তবে এসবের পরেও মেলিন্ডা বলছেন, ‘মানুষের জীবনে তিনটে বছর খুব কম নয়। কলকাতায় আমি যে তিনটে অসাধারণ বছর কাটালাম, সেটা সারা জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে। থ্যাঙ্ক ইউ কলকাতা।