Footpath In Kolkata,ফুটপাথের অফিসেও এসি, দোকানে চলছে ফ্রিজ! শহরজুড়ে দখলদারি – kolkata municipality survey says about 60 to 70 percent footpath are now occupying


কর্পোরেট সংস্থার মতো ঝাঁ চকচকে অফিস ঘর। মেঝেতে মার্বেল পাতা। দেওয়ালেও টাইলস দেওয়া। বসার জন্য রয়েছে দামি সোফা। গরমে ঘর ঠাণ্ডা করার জন্য বসানো হয়েছে এসি। পার্ক স্ট্রিট এবং এজেসি বোস রোডের ক্রসিং থেকে কিছুটা দূরেই রাস্তার ফুটপাথ দখল করে তৈরি হয়েছে এই অফিস ঘর। বাইরে বড় করে লেখা, সোসাইটি ফর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার।এখানেই নিয়মিত বসেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার মানজার ইকবাল। বছর কয়েক আগেও তিনি কলকাতা পুরসভার লাইটিং বিভাগের মেয়র পারিষদ ছিলেন। সে সময়েই পুরসভার ফুটপাথ দখল করে রাতারাতি এই অফিস ঘর বানানো হয়। সম্প্রতি নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে শহরের ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়ায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ধমক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার এই নিয়ে তীব্র অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন তিনি। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমকেও বিষয়টি দেখতে বলেছেন। সেই খবর কানে পৌঁছেছে মানজার ইকবালেরও। যদিও তিনি এ নিয়ে খুব একটা বিচলিত নন। নির্লীপ্ত ভঙ্গিতে জানাচ্ছেন, ‘আমি ওখানে মাঝে মধ্যে বসি ঠিকই তবে কোনও পদে নেই। আমি ওদের মেন্টর। প্রশাসন যদি বলে আমি অফিস ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’

কলকাতার ফুটপাথ কতটা বেদখল হয়ে গিয়েছে তা জানতে সম্প্রতি শহরজুড়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল পুরসভা। কোথায় কোথায় ফুটপাথের উপর স্থায়ী কাঠামো রয়েছে সে ব্যাপারে বিশদ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বিভিন্ন বরোর দায়িত্বে থাকা সিভিল ডিপার্টমেন্টের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররা। তা থেকেই জানা গিয়েছে, কলকাতা মহানগরীর প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ফুটপাথ এখন বেদখল।

কোথাও ফুটপাথের উপর তৈরি হয়েছে দলীয় পার্টি অফিস। কোথাও আবার এলাকার কাউন্সিলারই ফুটপাথে নিজের চেম্বার খুলে বসেছেন। বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাথের উপর লোহার কাঠামো দিয়ে স্থায়ী দোকান বানানো হয়েছে। কোথাও লাগানো হয়েছে এসিও। তাতে আবার অনুমোদন দিয়েছে খোদ পুরসভাই।

শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছরে কলকাতা শহরে মন্দিরের সংখ্যা অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গিয়েছে। যার বেশিরভাগই তৈরি হয়েছে ফুটপাথ কিংবা সরকারি জমিতে। পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের ধর্মতলা ও নিউ মার্কেট চত্ত্বর, গড়িয়াহাট, যাদবপুর, রাসবিহারী, হাতিবাগান, ডালহৌসি অফিস পাড়া, শিয়ালদহ, বউবাজার, বেহালা, উল্টোডাঙা, মানিকতলা, পার্ক সার্কাস, হাজরা, গার্ডেনরিচ এবং খিদিরপুর এলাকায় ফুটপাথের ৫০-৬০ শতাংশ দখল হয়ে গিয়েছে।

কলকাতা পুরসভার সদর দপ্তরের সামনের রাস্তাও কার্যত হকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। পুরসভায় গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে সমস্যায় পড়ছেন পুরকর্তারা। এমনকী, হকার রুখতে পুরভবনের গেটের সামনে সর্বক্ষণের জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ের ১০০ মিটারের মধ্যে হকাররা বসতে পারেন না। তা সত্ত্বেও শহরের সবথেকে ব্যস্ততম এলাকায় ধর্মতলা মেট্রো স্টেশনের গেট আটকে দিনভর ব্যবসা করছেন হকাররা।

মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরেই ‘অ্যাকশন’, সল্টলেকে ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে তৎপর পুলিশ

পুর আধিকারিকদের আশঙ্কা, ফুটপাথে যেভাবে স্থায়ী দোকানঘর তৈরি হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে জলের পাইপ লাইন বসানো কিংবা কেবল লাইন পাততে সমস্যা হবে। কোনও বাড়িতে আগুন লাগলে দমকল ঢুকতে পারবে না। কলকাতার পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ সদস্য দেবাশিস কুমার এর জন্য ঘুরিয়ে পুলিশকে দায়ী করছেন।

তাঁর কথায়, ‘কেউ ফুটপাথ দখল করলে পুলিশের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা অনেক জায়গায় ফুটপাথকে দখল মুক্ত করেছি। ভবিষ্যতে আরও করতে হবে। বিজেপির মদতে শহরের ফুটপাথে অনেক মন্দির তৈরি হয়েছে। ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারছি না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *