অনির্বাণের একমাত্র পুত্র অস্মিকের অভিভাবক হিসেবে প্রাক্তন স্ত্রী শর্মি চট্টোপাধ্যায় বহরমপুর থানায় দায়ের করা অভিযোগে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আইনি উত্তরাধিকারীকে মৃত্যুর খবর ও শেষ দেখার সুযোগ না দিয়েই সৎকার করে দেওয়া হলো দেহ? ময়নাতদন্ত এড়িয়ে কেন ডেথ সার্টিফিকেট নিতে হলো স্থানীয় হোমিয়োপ্যাথি ডাক্তারের থেকে, সে প্রশ্ন তুলছেন একদা সতীর্থ চিকিৎসকরাও।
অনির্বাণের প্রথম স্ত্রী শর্মির অভিযোগ, অন্য একটি সূত্র থেকে অনির্বাণের মৃত্যুর খবর পেয়ে তড়িঘড়ি বহরমপুরে দৌড়ে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, দেহ সৎকার করে ফেলা হয়েছে। তাঁর আক্ষেপ, ‘শেষ দেখাও দেখতে পেলাম না। অস্মিকও তার বাবাকে দেখতে পেল না। করতে পারলো না শেষকৃত্য।’ অনির্বাণের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, শর্মির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেলেও ছেলেকে চোখে হারাতেন অনির্বাণ। হাওড়ায় আন্দুলের বাড়িতে গিয়ে প্রায়ই সময় কাটাতেন ছেলের সঙ্গে।
কয়েক মাস হলো বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থে শ্বশুরবাড়িতেই অনির্বাণ থাকছিলেন স্ত্রী অর্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর কর্মস্থল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের বদলে তাঁকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানের চিকিৎসক দেখেন, অনেক আগেই মারা গিয়েছেন অনির্বাণ। কিন্তু কেন ময়নাতদন্ত হলো না দেহের, সেই প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকরা।
এদিন চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারকে চিঠিও দিয়েছে। সংগঠনের বক্তব্য, ‘স্থানীয় এক হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে অনির্বাণের মৃত্যু হয়েছে বলে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, যাঁর কোনও কো-মর্বিডিটি ছিল না, তাঁর আচমকা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয়েছে বলে কী করে বুঝলেন ওই চিকিৎসক?’
অনির্বাণের মৃত্যু নিয়ে তাই বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছে আরও একটি চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স। একই দাবিতে স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে চিঠি লিখেছে চিকিৎসক সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামও। তাদের দাবি, মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা হোক।
সকলেই বিস্মিত, অনির্বাণের বাড়িতে কিংবা তাঁর বছর আটেকের ছেলে অস্মিককে না জানিয়েই কেন তড়িঘড়ি বহরমপুরের খাগড়া শ্মশানে দাহ করে দেওয়া হলো দেহ! চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বহরমপুরের চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওঁদের দুটো পরিবার আমার খুব কাছের। অনির্বাণের সঙ্গে দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছি। আমরা চাই, ওর মৃত্যুর আসল তথ্য উঠে আসুক। ময়নাতদন্ত করালে এসব প্রশ্ন উঠত না। পরিবারের পক্ষ থেকে ওটাই ভুল হয়েছে। এখন আইন আইনের পথে চলবে।’
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকেও মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চেয়ে স্বাস্থ্যসচিবের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
