শনিবার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘অভিযুক্তদের কোনও রেয়াত করা হবে না। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ উল্লেখ্য, শুক্রবার বউবাজারের উদয়ন হস্টেলে মোবাইল চুরির অভিযোগে এক মাঝবয়সি ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করেন কয়েকজন ছাত্র।
শনিবার দুপুরে সল্টলেকের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার পোলেনআইটে গিয়ে দেখা যায় গোটা এলাকা থমথমে। আতঙ্কে কেউ কোনও কথা বলতে চাইছেন না। মৃত যুবক ও অভিযুক্ত সরকার পরিবারের বাড়িও তালাবন্ধ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পোলেনআইটের বাসিন্দা মৃত প্রসেন মণ্ডল একজন দিনমজুর। বিভিন্ন জায়গায় ঠিকা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যাওয়ায় দিদা ভাগ্যবতী মণ্ডলের সঙ্গেই থাকতেন ওই এলাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘প্রসেন দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অসুখে ভুগছিলেন। সেজন্য পাভলভ হাসপাতালে বেশ কয়েকবার তাঁকে চিকিৎসা করানো হয়। এর আগেও এলাকায় হাত সাফাই, ছোটখাটো চুরির অভিযোগও উঠেছিল ওই যুবকের বিরুদ্ধে। প্রসেনের বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে পেশায় ফল ব্যবসায়ী তপন সরকারের বাড়ি। সোমবার ভোরে তপনের ঘুম ভাঙলে তিনি দেখতে পান মাথার কাছে রাখা দশ হাজার টাকা দামের মোবাইলটি নেই। সেটি খোয়া গিয়েছে। মোবাইলের খোঁজে বাইরে আসতেই তাঁর নজরে পড়ে বাড়ির সামনে এলাকার যুবক প্রসেন ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁকে পাকড়াও করে মোবাইলের বিষয়ে জানতে চান তিনি।’
তপনের দাবি, ‘প্রসেন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জানান মোবাইল নিয়েছি, কিন্তু কোথায় রেখেছি তা মনে করতে পারছি না।’ অভিযোগ, এরপর বাড়ির সামনেই প্রসেনকে এলোপাথাড়ি কিল, চড়, ঘুষি মারতে থাকেন তপন। প্রসেন চিৎকার করতে করতে পোলেনআইট সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে ঢালাই রাস্তা ধরে পালানোর চেষ্টা করেন। সে সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রসেনকে ঘিরে ফেলেন তপনের ছেলে হর্ষিত ও তাঁর বন্ধু শ্রীদাম। সেখানেও তিনজনে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করায় সংজ্ঞাহীন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই যুবক।
ততক্ষণে খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন প্রসেনের সত্তরোর্দ্ধ দিদা ভাগ্যবতীও। গণপিটুনি দেখে তিনি পথচলতি মানুষদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানালেও কেউ এগিয়ে যাননি বলে অভিযোগ। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে ভাগ্যবতী ও তপন একসঙ্গে প্রসেনকে নিয়ে করুণাময়ী সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন ওই যুবক মারা গিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এরপর তপনকে আটকে রেখে ইলেক্ট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই জেরার মুখে তিনি ভেঙে পড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দা দীপক মণ্ডল বলেন, ‘প্রসেন যদি মোবাইল চুরি করেও থাকে তবে ওঁকে ধরে পুলিশের হাতে দিতে পারতো, আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার কোনও দরকার ছিল না।’ পুলিশের বক্তব্য, ধৃতদের রবিবার আদালতে হাজির করা হবে।