ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও তার ইঙ্গিত মিলেছে। মারধরের জেরে শরীরের বিভিন্ন অংশে যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত বা ‘ফ্লুইড’ না পৌঁছনোতেই মৃত্যু হয় ইরশাদের, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে ‘হাইপোভলিউমিক শক’। উদয়ন হস্টেলে খুনের ঘটনায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর পাশ এক প্রাক্তনীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০১৯ সালে তিনি পাস করেন। তার পরেও হস্টেল ছাড়েননি।
পুলিশ সূত্রে খবর, কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা ওই যুবক উদয়ন হস্টেলে দারোয়ান তথা নাইট গার্ডের কাজ করতেন। ধৃত ১৪ জনের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের এক বাসিন্দাও। ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত নিয়ে এমএ পাস করেন ওই প্রাক্তনী। হস্টেলে তাঁর পরিচয় ছিল রাঁধুনির হেল্পার!
তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, ওই পদগুলিতে কী ভাবে ওই দুই প্রাক্তনীর নিয়োগ হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, আদৌ নিয়োগও হয়েছিল, নাকি হস্টেলের থাকার জন্য শুধু পদটুকু দেওয়া ছিল। এই ধোঁয়াশা কাটাতে হস্টেল সুপার শক্তিপদ বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় মুচিপাড়া থানা। তাঁকে তলবও করা হতে পারে।
কারণ, ইরশাদকে হস্টেল সুপারের ঘরের কাছেই মারধর করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনও মন্তব্য করতে পারব না। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।’ শুক্রবার সকালে মারধরের ঘটনার সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ইরশাদকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু হস্টেলে ঢোকার গেটে তালা মেরে রেখেছিলেন আবাসিকেরা।
উল্লেখ্য, গত অগস্টে প্রায় একই ঘটনা ঘটে যাদবপুর মেন হস্টেলেও। সেখানেও প্রাক্তনীদের নির্দেশে মেন গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। পুলিশকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ইরশাদের ঘটনায় তদন্তকারী অফিসারেরা স্থানীয়দের থেকে জেনেছেন, উদয়ন হস্টেলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের আনাগোনা লেগে থাকত।
গভীর রাত পর্যন্ত চেঁচামেচি চলত, আবাসিকরা বাইরে মদের বোতলও ছুড়তেন বলে অভিযোগ। ইরশাদকে মারধরের পরে অভিযুক্তরা প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় স্থানীয় একটি কেকের দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ মুছিয়ে দিয়েছিলেন। এই অপরাধমনস্কতার কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপহরণ, খুন এবং ষড়যন্ত্রের মতো ধারাও যুক্ত হয়েছে।