লালবাজার সূত্রে খবর, বাঁশদ্রোণী থানার দ্বারস্থ হয়ে এক মহিলা অভিযোগ করেন, গত ৩০ জুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক সেজে এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার আর্থিক প্রতারণা করেছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বাঁশদ্রোণী থানা ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩১৮ (৪) ধারায় মামলা রুজু করে। আইনজীবীরা এখানেই আপত্তি তুলেছেন।
তাঁদের বক্তব্য, ‘ওই মহিলা ১ জুলাই অভিযোগ করলেও যেহেতু ৩০ জুন রাত ১২টার আগে ঘটনাটি ঘটেছে তাই IPC-তে মামলা দায়ের করা উচিত ছিল।’ অর্থাৎ পুরোনো আইনে সেটি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা, অর্থাৎ প্রতারণার মামলা ছিল। না বুঝে ভুল আইনে মামলা দায়ের করা হলে অনেক ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদের হেরফেরও হতে পারে বলে মত আইনজ্ঞদের।
নয়া আইনি বিধান নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা মানছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পেশাগত ভাবে প্রবীণ এই আইনজীবীর পর্যবেক্ষণ, ‘আইনজীবী হিসেবে আমি দেখেছি যে ভাবে আইনের বিন্যাস করা হয়েছে, তার ফলে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জানি না আইনজীবীরা কী ভাবে সামাল দিতে পারবেন!
এই বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত ছিল। বার কাউন্সিলের কোনও মতামত নেওয়া হয়নি। কোনও মতামত না নিয়েই এটা পাশ করানো হয়েছিল।’ আইনের এই ‘ধোঁয়াশা’ কাটাতে লালবাজারের তরফে সব থানার ওসি-কে সতর্ক ভাবে মামলা রুজু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকী, আইপিএস অফিসারেরাও আইনজ্ঞদের কাছে নতুন আইনের পাঠ নিচ্ছেন বলে লালবাজার সূত্রে খবর।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বেশ কিছু আইন ভালো হতে গিয়েও হতে পারেনি। বদলে যা আনা হয়েছে, তা এক কথায় পুলিশের হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা তুলে দেওয়া। এসব আইনের যে অপব্যবহার হবে না, তার গ্যারান্টি কে নেবে?’
আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, ‘নতুন আইনে অনেক নানা দিক রয়েছে। তা রাতারাতি স্পষ্ট হবে না। যদি কোনও ঘটনা ১ জুলাইয়ের আগে হয়ে থাকে, এফআইআর হবে IPC-তে। কিন্তু ওই মামলাই যে হেতু নতুন আইনের আদালতে ট্রায়াল শুরু হবে, তাই সিআরপি-তে হবে না। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS)-তে হবে।’
১১ টি জেলার পুলিশ কর্মীদের ইতিমধ্যে নয়া আইনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন আইনজীবী সৌমজ্যিৎ রাহা। তিনি বলেন, ‘নয়া আইনে বলা হয়েছে কারও বাড়িতে অভিযান চালানোর সময়ে পুরোটা ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখতে হবে। সিজার লিস্টের ভিডিয়ো করে রাখতে হবে। কিন্তু, ফোনে সেই পরিমাণ জায়গা কোথায়? তাছাড়া, এটা চালিয়ে যেতে খরচ অনেক।’
এখানেই শেষ নয়, অভিযোগের নথি রাখার জন্য ৬ টি খাতা থানায় রাখতে বলা হয়েছে। এরমধ্যে একটি অনলাইনে আসা অভিযোগের জন্য, একটি জেনারেল জিরো এফআইআর, প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য একটি, এছাড়া সাধারণ এফআইআর, জেনারেল ডায়েরি, নন কগনিজেবেল অফেন্সের জন্য আলাদা। ফলে এটা কতটা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবীদের একাংশ।