Land Mafia,রাত হলেই ঢেলা মারে ভূতের দল! সকালে লিখে দিতে হয় জমি – land mafia violence increasing in east medinipur kolaghat village


এই সময়: ভূতেরা কী খায়? কোলাঘাটের গোবিন্দচকের নিশীথ সামন্তের প্রশ্ন শুনে খানিকটা থতমত খাওয়ার জোগাড় হয়েছিল। ঘাবড়ে গিয়েছি দেখে মুচকি হেসে বললেন, ‘বিঘার পর বিঘা জমি ওরা খায় গপ গপ করে। জমির চরিত্র বদল না করেই সব খেয়ে ফেলে। অথচ ভূমি রাজস্ব দপ্তর বা সেচ দপ্তর কিছুই নাকি জানতে পারে না।’ এসব নিয়ে অভিযোগ হয় না? প্রশ্ন শুনে এক হাত তফাতে এসে নিশীথ ফিস ফিস করে বললেন, ‘জানাবে কে? ভূতেদের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে যে বুকের পাটা লাগে!’ব্যাপারটা খুলেই বললেন তিনি। ভেড়ি মাফিয়াদের জমি দখলের প্রতিবাদ করার শাস্তি হিসেবে ভূতেরা কোলাঘাটের চাকদা গ্রামে অশোক নায়েকের হোসিয়ারি কারখানা পুড়িয়ে দিয়েছিল। প্রায় বছর চার আগের সেই ঘটনা এখনও তাড়া করে বেড়ায় এলাকার মনুষকে। তারপর থেকে কোলাঘাট এলাকায় ভেড়ি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে গলা তুলে কথা বলার সাহস পায় না কেউ।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুরে ভূমি দপ্তর ও সেচ দপ্তরে ভূতেদের বাস। তারা সব অভিযোগ এমন ভাবে হজম করে যে দপ্তরের কর্তাদের কাছে পৌঁছনোর আগেই উবে যায়। উপকূলবর্তী এই জেলা নদী, খালবিল, সমুদ্রে ঘেরা। বনভূমির পরিমাণ খুব কম। জেলায় অধিকাংশ জমি ভূমি দপ্তর ও সেচ দপ্তরের অধীন। হালে পর্যটন ও মাছ চাষের কারণে জমির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে জমি মাফিয়া বা ভূতেদের দৌরাত্ম্য।

তবে জোর করে নয়, তারা পরিস্থিতি এমন তৈরি করে যাতে মালিকরা বাধ্য হয় জমি দিতে। কেউ যদি তাঁর জমি না দেয় তাহলে কী হবে? দেপাল গ্রামের মানিক মাইতি বলেন, ‘গোবিন্দচকের প্রশান্ত সামন্তের মতো অবস্থা হবে। মাছের ভেড়ি তৈরির জন্য প্রশান্তবাবুর জমি চেয়েছিল ভেড়ি মাফিয়ারা। রাজি না হওয়ায় তাঁর জমির চারদিকে মাছের ভেড়ি তৈরি করে জমি ঘিরে দেওয়া হয়। ফলে ৪ বছর ধরে ভেড়ি ঘেরা জমি পতিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।’

পরিবেশবিদদের অভিযোগ, সমুদ্র থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় চাষের জমিতে অসংখ্য মাছের ভেড়ি তৈরি হয়েছে। ফলে এলাকার বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সমুদ্র ও ভূগর্ভস্থ জলে দূষণ ও লবণের মাত্রা বেড়েছে। শুধু জমি দখল করে মাছের ভেড়ি নয়, চাষের জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রির রমরমা কারবারও চলছে জেলায়। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত জমি-বাড়ির জায়গা ভরাটের জন্যে দেপাল, দিঘা, মন্দারমণি ও তাজপুরের বালিয়াড়ির বালির চাহিদা ছিল। কিন্তু ভূতেদের দৌরাত্ম্যে বালিয়াড়ি আর নেই বললেই চলে।

বালি যখন শেষ তখন চাষের জমিতে নজর পড়েছে ভূতেদের। স্থানীয়দের কথায়, এক ট্র্যাক্টর মাটির দাম আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। অত টাকা দিয়ে কে কিনবে? চাষ জমি ছেড়ে এ বার তাদের হাত পড়েছে পটাশপুরের কেলেঘাই ও বাগুইনদী সংলগ্ন জমিদারি বাঁধে। পটাশপুরের বাসিন্দা পরিবেশবিদ সোমনাথ দাস অধিকারী বলেন, ‘বন্যা প্রতিরোধের জন্য এই জমিদারি বাঁধ তৈরি হয়েছিল কয়েক দশক আগে। সেই বাঁধের দু’দিক থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে মাফিয়ারা। শুধু বাঁধ নয়, মজে যাওয়া কেলেঘাই নদীর বেড থেকেও মাটি লুট হচ্ছে। ভূমি বা সেচ দপ্তর বলে কিছু আছে কিনা বোঝা যায় না।’

রেজিস্ট্রি নয়, ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারেই কামাল!

এই দুই দপ্তরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলার অনেকেই। মন্দারমণি এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক দীপক দাসের অভিযোগ, ‘হোটেল তৈরির জন্য কলকাতার ব্যবসায়ীদের কাছে মন্দারমণি-সহ উপকূলের জমির চাহিদা বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে জমি মাফিয়াদের আনাগোনা। জমির চরিত্র বদল না করেই খাস জমি কিংবা পাট্টা দেওয়া জমিতে একের পর এক হোটেল তৈরি হচ্ছে। উদয়পুর থেকে জুনপুট পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার উপকূল জুড়ে পর পর হোটেল তৈরি হয়েছে সিআরজেড (কোস্টাল রেগুলেশন জোন) বিধি না মেনে।’

ঘটনা যে সত্যি, কাঁথির এসডিও সৌভিক ভট্টাচার্যের কথাতেই তা পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘মন্দারমণি-সহ উপকূল এলাকায় বেশ কয়েকটি অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করে নোটিস পাঠানো হয়েছে।’ জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজিও জানিয়েছেন, অবৈধ নির্মাণ ও জবরদখল বরদাস্ত করা হবে না। এসব হুমকি-টুমকি দিয়ে ভূতেদের কি তাড়ানো সম্ভব? প্রশ্ন ভুক্তভোগী মানুষের।

(তথ্য সহায়তাঃ—সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জয় চক্রবর্তী, সোমনাথ মাইতি, সমীর মণ্ডল ও অরূপকুমার পাল)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *