দুপুর ২ টো ২০ নাগাদ সংশোধনাগার থেকে আরাবুল বেরোতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে অনুগামীরা। কে সবার আগে তাঁর গলায় রজনীগন্ধার মালা পরাবে তা নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। দীর্ঘদিন জেলজীবনে শরীর ভেঙেছে আরাবুলের। গলায় ছিল না পুরোনো তেজও। বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘পাঁচ মাস পরে ফিরছি। আমাকে নিয়ে কে কী বলেছে সে বিষয়ে আমি এখন কিছু বলব না। ৪-৫ দিন পরে আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলব।’
ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুলকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ। লোকসভা নির্বাচনে ভাঙড়ের ভোট নিয়ন্ত্রণ করেছেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। দল ও সংগঠনে আলগা হয়েছে আরাবুলের রাশ। তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমিতির কার্যালয় থেকেও তাঁর নেমপ্লেট খুলে দেওয়া হয়।
এ দিন জেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আগামী দিনে তৃণমূল করবেন কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে আরাবুল বলেন, ‘তৃণমূল আমাকে করতেই হবে। আমি আজ থেকে নয়, ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের সঙ্গেই আছি।’ পঞ্চায়েত সমিতিতে তাঁর ঘর বেদখল হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘একটা ঘর যদি কেউ দখল করে নেয় সেটা পরের কথা। আমি দলের কর্মীদের বলে দিয়েছি ভাঙড়ে ফিরে গিয়ে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবে।’
শওকত মোল্লা তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চক্রান্তের অভিযোগ এনেছিলেন। তার জবাবে শওকতের নাম না করে আরাবুল বলেন, ‘আমি জীবনে রাজনীতিতে কারও খুনের চক্রান্ত করিনি। যে বা যারা বলেছে, আমি তা নিয়ে পুলিশের কাছে তদন্ত চাইবো। যারা বলে বেড়াচ্ছে তারা বুঝবে আগামী দিনে।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে আগামী দিনে বিজেপি বা আইএসএফে যোগদানের সম্ভাবনার কথা ফুৎকারে উড়িয়ে দেন তিনি। নেতাদের চেনা মুখ না থাকলেও ভাঙড়ে ফেরার পথে হাতিশালা, গাবতলা, পোলেরহাট বাজারেও আরাবুলকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়ান রিকশাওয়ালা, দোকানদাররা। সাধারণ কর্মী সমর্থকদের পাশে পেয়ে চোখে জল এসে যায় এক সময়ের দাপুটে নেতার।
তিনি বলেন, ‘অনেক প্রধানকে আমি হাতে করে তৈরি করেছি, পদে বসিয়েছি। তারা হয়তো কারও ভয়ে কিংবা চাপের মুখে পড়ে আমার সঙ্গে দেখা করছেন না। আরাবুল ইসলাম শেষ হয়নি, রাজনীতিতে কেউ শেষ হয় না।’