Adoption Process Online,হাসপাতাল নয়, দত্তক চাইলে গন্তব্য পোর্টালই – kalna hospital arrange a session to make people aware of the adoption process


সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
জন্মের পরেই মৃত্যু হয় মায়ের। সেই শোকে আত্মঘাতী হন বাবা। তার পর থেকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের আদরযত্নে বেড়ে উঠছিল এক শিশুকন্যা। আদর করে তাঁরা শিশুটির নাম রাখে কথা। নিয়ম মেনে সরকারি হোমে পাঠানো হয় কথাকে। এর পরই হাসপাতালের সকলের মনখারাপের খবর প্রকাশিত হয়েছিল ‘এই সময়’-এ।কিন্তু ব্যাপারটি এখানেই থামেনি। কথাকে দত্তক নিতে আগ্রহীদের একের পর এক ফোন আসতে থাকে হাসপাতালে। অচেনা নম্বরের ফোন ধরাই বন্ধ করে দেন হাসপাতাল সুপার। অনেকে সশরীরেও হাজির হন। এ ভাবে যে দত্তক নেওয়া যায় না, তার একটি পদ্ধতি রয়েছে তা বোঝাতে রীতিমতো কালঘাম ছোটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

শুধু কালনা নয়, রাজ্যের বহু হাসপাতালেই এমন ছবি দেখা যায়। এই ঘটনার পরে কালনা হাসপাতালের সুপার চন্দ্রশেখর মাইতি সিদ্ধান্ত নেন একটি শিবির করে সাধারণ মানুষ ও দত্তক নিতে আগ্রহীদের অ্যাডপশনের নিয়মনীতি নিয়ে জানাবেন তাঁরা। সেই মতো শুক্রবার হাসপাতালে হয়ে গেল একটি শিবির।

সেখানে একাধিক নিঃসন্তান দম্পতি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষকে দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াগুলি জানান জেলা শিশু সুরক্ষা দপ্তরের প্রোটেকশন অফিসার (এনআইসি) শোভনলাল পাল। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত cara.wcd.gov.in পোর্টালে গিয়ে আবেদন করতে হয় দত্তকে আগ্রহীদের। সেখানে প্যান কার্ড, নিজেদের ছবি, বিবাহের শংসাপত্র, বাসস্থানের শংসাপত্র, জন্মতারিখের প্রমাণপত্র আপলোড করতে হবে আবেদনকারীদের।

শারীরিক ও মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আর্থিক ভাবে সক্ষম ব্যক্তি বা দম্পতি শিশু দত্তক নিতে আবেদন করতে পারবেন। যদিও এক্ষেত্রে আর্থিক মাপদণ্ড মূল ব্যাপার নয়।’ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দিতে অনেকেই ভয় পান। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে খরচও বিপুল। ফলে নিঃসন্তান দম্পতিরা সহজ পথে সন্তানের দত্তক পেতে যোগাযোগ করেন হাসপাতালে।

দম্পতি ছাড়া একক ভাবে কি আবেদন করা যেতে পারে? শোভনলাল পাল জানান, সিঙ্গল মাদার বা ফাদারও আবেদন করতে পারেন। তবে সিঙ্গল ফাদার শুধুমাত্র শিশুপুত্রই দত্তক নিতে পারবে। যাঁরা আবেদন করেন তাঁদের বলা হয় প্রসপেক্টিভ অ্যাডপ্টিভ পেরেন্ট বা প্যাপ। ০-২ বছরের শিশু দত্তক নিতে চাইলে স্বামী-স্ত্রীর মোট বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৮৫ বছর।

সিঙ্গল মাদার-ফাদারের ক্ষেত্রে তা ৪০ বছর। আবার ২-৪ বয়সি শিশুর ক্ষেত্রে দম্পতির দু’জনের মোট বয়স হতে হবে ৯০। সিঙ্গলের ক্ষেত্রে ৪৫। কেউ ৮-১৮ বছর বয়সিকে দত্তক নিতে চাইলে দম্পতির দু’জনের বয়স হতে হবে ১১০। সিঙ্গল হলে ৫৫। এর পর আবেদন গৃহীত হলে আবেদনকারীর কাউন্সেলিং ও হোম ভিজ়িট করা হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অ্যাডপশন কমিটি।

দত্তকের নামে যাতে কোনও শিশু পাচারের শিকার না-হয় তার জন্য পুরো বিষয়টি মনিটরিং করে সংশ্লিষ্ট জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিট। দত্তক প্রক্রিয়ার খরচের ব্যাপারেও জানানো হয় এদিন। জানা গিয়েছে, হোম ভিজ়িটের জন্য নেওয়া হয় ৬ হাজার টাকা। সন্তান হ্যান্ডওভারের সময়ে দিতে হবে ৫৬ হাজার টাকা। দত্তক দেওয়ার পরবর্তী দু’বছর মনিটরিংয়ের জন্য ফি নেওয়া হয় মোট ৮ হাজার।

এদিন শিবিরে থাকা নদিয়ার ভালুকার এক দম্পতি চঞ্চল বিশ্বাস, রাধারানি বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের দু’বার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েও মারা যায়। এখানে এসে দত্তকের বিষয়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। সেইমতো এবার আবেদন করব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *