কিরণ মান্না: মহিষাদলবাসীদের অন্যতম গর্ব তার রথযাত্রা উৎসব। পুরী মাহেশের পরে অন্যতম এই মহিষাদল রথযাত্রা উৎসব। এই রথযাত্রা শুরু হয়েছিল মহিষাদলে রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায়। মহিষাদল রাজবংশের আদিপুরুষ জনার্দন উপাধ্যায়। জনার্দন উপাধ্যায়ের উত্তরসূরিদের মধ্যে ১৭৩৮ সালে যুবরাজ আনন্দলাল উপাধ্যায় রাজপদাভিষিক্ত হন। দীর্ঘ ৩১ বছর রাজত্ব করার পর ১৭৬৯ সালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করলে তাঁর সহধর্মিণী রানি জানকী রাজত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ণা ছিলেন। ১৭৭৬ সালে তিনিই এক রথ তৈরি করা শুরু করেন। কিন্তু তাঁর আমলে সেই রথ চলতে শুরু করেনি। ১৮০৫ সালে রাজবংশের মতিলাল পাঁড়ের (উপাধ্যায়) সময়ে সেই রথ চলার শুরু।
আরও পড়ুন: Weather: বৃষ্টিবিহীন কলকাতায় বাড়বে তাপমাত্রা, প্রবল দুর্যোগের পূর্বাভাস উত্তরে!
এই রথের ইতিহাস বহু প্রাচীন। আগে সতেরো চূড়া রথ ছিল। এখন তেরো চূড়া রথ হয়েছে। তেরো চূড়া রথের ঢাকার উচ্চতা ৪ ফুট। বেধ ৮ ইঞ্চি, পরিধি ১২ ফুট। লোহার পাত দিয়ে মোড়া মোট ৩৪টি চাকা আছে। রথের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। তবে কলস ও ধ্বজা দিয়ে সাজানো হলে উচ্চতা ৫০ ফুটেরও বেশি হয়ে যায়। প্রথম রথ তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় চৌষট্টি হাজার টাকা।
পুরী ও মাহেশের পরেই মহিষাদলের রথের নাম শোনা যায়। ভারতে একমাত্র কাঠের রথ হল মহিষাদলের প্রাচীন এই রথ। মহিষাদলের রথ ‘মদনগোপাল জিউ’-র রথ নামে খ্যাত। মদনগোপল জিউর সঙ্গে থাকেন জগন্নাথ ও রাজবাড়ির শালগ্রাম শিলা শ্রীধর জিউ। মহিষাদল রাজ পরিবারের সদস্যরা জানান অন্যান্য জায়গায় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা হলেও মহিষাদলের রথে যান রাজ পরিবারের কুলদেবতা মদন গোপাল জিউ। প্রথা অনুযায়ী রাজ পরিবারের কোনও সদস্য রথের রশিতে হাত দেওয়ার পরে রথযাত্রা শুরু হয়। মহিষাদলের বর্তমান রাজা হরপ্রসাদ গর্গ।
আরও পড়ুন: Ajker Rashifal | Horoscope Today: বিভ্রান্ত হবেন না মকর, আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহ তুলার…
মহিষাদলের বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তী জানান, মহিষাদল রথ কমিটির উদ্যোগে প্রায় এক মাস ধরে এই মেলা চলে। এই রথের মেলায় রথ টানার দিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে। পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেন যে, এই আড়াইশো বছরের প্রাচীন রথকে যাতে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়, সেটা দেখা হবে। তা ছাড়া ফি-বছর যে-সড়ক ধরে রথযাত্রা হয় তা পরিচ্ছন্ন করা, নর্দমা পরিষ্কার করা-সহ নানা কাজ নিয়ে প্রচুর জটিলতা তৈরি হয়। তিনি চান, সেই সড়কও নিয়মমতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা হোক এবং সড়কটিকে ‘রথযাত্রা সড়ক’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)